সাভারে ‘হৃদয় গ্রুপের’ নেতৃত্বে একাধিক হত্যা, গ্রেফতার ৮

ঢাকা সাভারে মাদক ব্যবসার টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ‘হৃদয় গ্রুপের’ সদস্যরা ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপের’ সদস্য আকাশ মাহমুদকে কুপিয়ে হত্যা করে গত বছরের ৯ জুলাই। এ ঘটনায় হৃদয় গ্রুপের প্রধান হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয়সহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। রবিবার দিবাগত রাতে সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সোমবার (২৫ মার্চ) দুপুরে কাওরান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো– হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয় (২৪), মো. আরিয়ান আহম্মেদ জয় ওরফে ড্যাগার আরিয়ান (২৩), নাসির উদ্দিন নাসু ওরফে বাবা নাসু (৫২), মো. আবিরুল হক আবির ওরফে কাটা আবির (২৪), জোবায়ের হাসান খন্দকার ওরফে পাইটু জোবায়ের (১৯), মো. জাকির হোসেন রনি (৩০), মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহেদ (৩৬) এবং আমির হামজা (২১)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র, হেরোইন ও কষ্টিপাথর সদৃশ মূর্তি।

র‍্যাব জানায়, সম্প্রতি সাভার এলাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে হৃদয় গ্রুপের সদস্যদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। এ গ্রুপের সদস্যরা ১২ মার্চ সাভার পৌর এলাকায় সোহেল নামে এক ব্যক্তিকে এবং ২১ মার্চ সোবহানবাগ এলাকায় আমজাদ নামে অন্য এক ব্যক্তিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে বলেও অভিযোগ ওঠে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র‍্যাব। সবশেষ রবিবার দিবাগত রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা হত্যাকাণ্ডগুলোর সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। তারা সাভার এলাকার হৃদয় গ্রুপের সদস্য। তারা এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। তাদের গ্রুপে ১০-১৫ জন সদস্য রয়েছে।’

কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, ‘গ্রেফতার আসামিরা সাভারের আড়পাড়া এলাকায় একটি বাসায় ডিজে পার্টির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে একটি মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে চুরির অভিযোগে দুই যুবককে মারধর করে তারা। পরে ঘটনার জেরে সাভারের একটি খাবার হোটেলের ভেতর ‘হৃদয় গ্রুপ’ ও ‘পিনিক রাব্বি গ্রুপের’ সংঘর্ষে আকাশকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিরা পূর্বশত্রুতার জেরে ছিনতাই করা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে গত ২২ মার্চ আমজাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে কৌশলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর জখম করে সাভার এলাকার সবুজবাগ পুকুর পাড়ে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

তিনি বলেন, ‘চার থেকে পাঁচ বছর ধরে হৃদয়ের নেতৃত্বে হৃদয় গ্রুপ পরিচালিত হয়ে আসছে। গ্রেফতার ব্যক্তিরা এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতো। নির্জন জায়গায় পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরতো এ গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। পরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতো। আকাশ হত্যা মামলার এক নম্বর পলাতক আসামি হৃদয়। তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক, হত্যা ও ছিনতাইসহ ছয়টি মামলা রয়েছে।’