‘সরকার ট্যাক্স পায় ২২ হাজার কোটি টাকা, ক্ষতি ৩০ হাজার কোটির’

সরকার তামাকজাত পণ্য থেকে প্রতি বছর ২২ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স পায়। কিন্তু এই তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয় বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য আবু সালেহ মো. নাজমুল হক।

রবিবার (৩১ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগী করার দাবিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।

সংবাদ সম্মেলনে আবু সালেহ মো. নাজমুল হক বলেন, শুধু ধুমপান নয়, যেকোনও তামাক দূর করার জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন করতে হবে। সরকার তামাকজাত পণ্য থেকে প্রতি বছর ২২ হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স পায়। কিন্তু এই তামাকজাত পণ্য ব্যবহার করে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয় ৷ তামাক ব্যবহারকারীদের কোনভাবেই উৎসাহিত করা যাবে না। তামাক ব্যবসায়ীদের আইনগত সাহায্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্য এবং দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। জনস্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং সর্বসম্মতিক্রমে যে তামাক নিয়ন্ত্রণে যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছি।   

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ফলে এই মৃত্যুর মিছিল কমাতে দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কারণ বিদ্যমান আইনে কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়ে গেছে। যা তামাকের ভয়াবহ ছোবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারছে না।

সম্মেলনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে যে ৩টি বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হলো বর্তমান আইনকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত করা। এই আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ৬টি সুপারিশ জানানো হয়।

সুপারিশগুলো হলো, সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনও ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। এসময় তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো তুলে ধরে  মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। এছাড়া অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।