ঈদের আনন্দের পূর্ণতা শিশুদের উদযাপনেই

বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়া শৈশবের সুন্দরতম স্মৃতির একটি। মূলত এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের নামাজ আদায় বড়দের জন্য নিয়ামত হলেও, ঈদের আনন্দ পরিপূর্ণ হয়ে ধরা দেয় শিশুদের উদযাপনেই। নতুন জামা, জুতা, টুপি ও হাতঘড়ি পরে পরিবারে ঈদ আনন্দকে বাড়িয়ে দেয় তারা বহু গুণ।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর তেজগাঁও তেজকুনি পাড়ায় বায়তুল ফালাহ্ জামে মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে আসে দুই বছর ছুঁই ছুঁই সাবিদ। নতুন জামা, জুতা ও হাতঘড়ি পরে প্রথমবার ঈদ জামাতে এসেছে সে। তবে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য সাবিদের বাবা দেশের বাইরে অবস্থান করায় আজ তার কাছে দাদার হাতই ছিল একমাত্র অবলম্বন।

বেশ হাসিখুশি ও আনন্দিত সাবিদ দাদার সঙ্গে ঈদ নিয়ে গল্পে মেতে ওঠে। ঈদ নিয়ে তার শিশুমন জানতে চায় অনেক কিছু, তাই বারবার তার দাদাকে প্রশ্ন করছিল।

ঈদ কেমন লাগছে, জানতে চাইলে ছোট ছোট শব্দে সাবিদ বলে, ‘আমি নতুন কাপড় পড়েছি, দাদার সঙ্গে আসছি, নামাজ পড়েছি।’

সাবিদের দাদা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানেই পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটানো। আর পরিবারে শিশুদের হাসি-আনন্দই ঈদের আনন্দ।

বৃদ্ধ আলমগীরের আরও তিন নাতি-নাতনি আছে। তারা সপরিবার কানাডায় বসবাস করে। তাদের বিয়োগব্যথা অনুভব করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে দাদা আলমগীর বলেন, ‘চাইলেও তারা আমাদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারছে না। পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটানোই ঈদ উদযাপন।'

ঈদের সালাত আদায়ের পর কোলাকুলি করছেন মুসল্লিরা

তিনি আরও বলেন, ‘পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার জন্য আমার ছেলে দেশের বাইরে আছে। তাই নাতিকে নিয়ে ঈদের নামাজ পড়েছি। এটা আমার জন্য অনেক বড় আনন্দের।’

রাজধানীর তেজগাঁওয়ের অধিকাংশ মসজিদে আজ ঈদুল ফিতরের জামাত শুরু হয়েছে সকাল ৮টায়। তবে দু-একটি মসজিদে আদায় হয়েছে একাধিক জামাত। মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ আজ নতুন পাজামা-পাঞ্জাবি পরে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েন নামাজ আদায় করতে। তাদের সঙ্গে শিশুদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়।

ঈদ মানেই নতুন পোশাক, নতুন টাকার সালামি, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়ানো ও ঘোরাঘুরি। এদিন ধর্মপ্রাণ মানুষ নতুন কাপড় ও সুগন্ধি লাগিয়ে ঈদে ঈদের নামাজ পড়েন। পরে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন, আড্ডায় জমে ওঠেন অনেকে। মানুষে মানুষে যত মনোমালিন্য ও হিংসা-বিদ্বেষ থাকুক, সেসব বাধা দূর করে দেয় ঈদ।

তবে ধনীদের কাছে ঈদের আনন্দ উপভোগ হয়ে ধরা দিলেও, অনেক গরিব ও ছিন্নমূলের কাছে তা অকল্পনীয় হয়ে থাকে। অনেক শিশু এসব আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় অভাব আর দারিদ্র্যের কারণে।

তেজকুনি পাড়ার বাসিন্দা সোলাইমান সজিব বলেন, ঈদ মানে নতুন পোশাক ও আনন্দ উদযাপন। মুসলিম জাতির জন্য বছরের দুই আনন্দের দিন আসে। ঈদুল ফিতর তার মধ্যে অন্যতম। আমাদের অতীত কিংবা ভবিষ্যতের যত মনোমালিন্য থাকুক, এদিন বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও পরিবার-পরিজন বেশ আনন্দ করবো, এটাই স্বাভাবিক। 

ফয়সাল আহমেদ বাপ্পি বলেন, মুসলিম জাতি দীর্ঘ এক মাস সিয়াম পালনের পর মহান আল্লাহ এই দিনটি দিয়েছেন আনন্দ করা জন্য। এদিন ধনী-গরিব সবাই অনেক আনন্দ করে থাকে।

আরও পড়ুন:

স্বজন ছাড়াই ঈদ কাটবে আশ্রয়কেন্দ্রের শিশুদের

‘বাবার কথা আমার খুব মনে পড়ছে’

ছেলেকে ছাড়া ঈদ চিন্তা করলেই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে!