শিব নারায়ণ দাসের মরদেহ বিএসএমএমইউ-এ হস্তান্তর

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মূল নকশাকার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের (৭৫) দানকৃত মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্তান্তর করা হয়েছে। রবিবার (২১ এপ্রিল) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হকের উপস্থিতিতে অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানুর কাছে মরদেহটি হস্তান্তর করা হয়। মরদেহটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগে সংরক্ষণ এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও গবেষণার কাজে ব্যবহারের আবেদনপত্রটি বিভাগীয় চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া হয়।

অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হকের উপস্থিতিতে অ্যানাটমি বিভাগের প্ল্যাস্টিনেশন ল্যাব অ্যান্ড মিউজিয়াম কমপ্লেক্সে মরদেহের সম্পূর্ণ এমবামিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। প্রক্রিয়ার শুরুতে অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানুর পরিচালনায় এবং অ্যানাটমি বিভাগের সব শিক্ষক, কর্মচারী ও রেসিডেন্টের অংশগ্রহণে মরদেহের যথোচিত সম্মান ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য শপথ গ্রহণ করা হয়।

এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক এই ধরনের মহৎ উদ্যোগের প্রশংসা এবং মরণোত্তর দেহ দানকারীর ছেলে অর্ণব আদিত্য দাসসহ পরিবারের সবাইকে এই ত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি দেশের সকল মানুষের প্রতি এমন মহতী কাজে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। 

এসময় উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অন্যতম ও মূল নকশাকার এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লা নিবাসী শিব নারায়ণ দাস তার চোখের দুটি কর্নিয়া দান করে গেছেন। ইতিমধ্যে সেই কর্নিয়া দিয়ে দুই জন মানুষের চোখে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তিনি একজন মহান ব্যক্তিত্ব। তার এই দানে আমি অভিভূত ও গর্বিত এবং সম্মানিত বোধ করছি। তার মরদেহ প্ল্যাস্টিনেশন পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হবে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মূল নকশাকার মুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের এই দেহ দানের মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন বিদেশি ছাত্রছাত্রীসহ ৪ হাজার ৮০৭ জন চিকিৎসা পেশায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী ছাত্রছাত্রী প্রশিক্ষণ গ্রহণের ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন। তিনি মরণোত্তর দেহদানের মাধ্যমে মহত্বের অন্যন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন।

এ সময় জাসদ নেত্রী শিরীন আখতার, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিষয়ক অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু, অধ্যাপক ডা. নাহিদ ফারহানা আমিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. লতিফা নিশাত, ডা. শাফিনাজ গাজী, সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন আক্তার সুমি, ডা. মো. মহিউদ্দীন মাসুম, স্বর্গীয় শিব নারায়ণ দাস-এর সহধর্মিনী গীতশ্রী চৌধুরী, পুত্র অর্ণব আদিত্য দাস প্রমুখসহ অ্যানাটমি বিভাগের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান ও জেনেটিক্স অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিষয়ক অধ্যাপক ডা. লায়লা আনজুমান বানু বলেন, ‘ইতিমধ্যে ১৫০ জন মানুষ মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পন্ন করেছেন। মানুষ যেভাবে সাড়া দিচ্ছেন প্ল্যাস্টিনেশন ল্যাব অ্যান্ড মিউজিয়াম কমপ্লেক্সটি একটি আন্তর্জাতিক মানের সমৃদ্ধ ল্যাবে শিগগিরই উন্নীত হবে ‘

এসময় অর্ণব আদিত্য বলেন, ‘আমার বাবা শিব নারায়ণ দাস আজীবন জ্ঞান অর্জনসহ দেশকে শিক্ষণীয় বিষয়ে সমৃদ্ধ দেখতে চেয়েছেন। সে লক্ষেই তিনি তার জীবন দান করে গেছেন। আমি ও আমার মাও মরণোত্তর দেহদানের অঙ্গীকার করেছি। আপনারা সবাই আমাদের আশীর্বাদ করবেন।’

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার মূল নকশাকার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা কুমিল্লা নিবাসী শিব নারায়ণ দাস গত ১৯ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন।