হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের

‘প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ সাধনার ফসল সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনায় এবার অভাবনীয় কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিছু ঊর্ধ্বতন  কর্মকর্তা ও মক্কা হজ মিশনের কিছু কর্মকর্তার অবহেলা বা দায়িত্বহীনতার ফলে এসব জটিলতা তীব্র আকার ধারণ করছে। এগুলোর দ্রুত সমাধান না হলে এবারের হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।’

বুধবার (২৪ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হজ এজেন্সির মালিকরা।

তারা ব‌লেন, গত ১৮ এপ্রিল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখা থেকে সৌদি সরকারের একটি চিঠির বরাতে জানানো হয়, আগামী ২৯ এপ্রিল হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাবে। ২৯ এপ্রিলের মধ্যেই আবশ্যিকভাবে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করতে হবে। এজেন্সির অবহেলায় কারও হজে যাওয়া অনিশ্চিত হলে এজেন্সির বিরুদ্ধে হজ ও উমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১ অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে ১০ ফ্রেব্রুয়ারি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক পত্রে জানানো হয়, রাজকীয় সৌদি সরকারের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব ধরনের অনলাইন চুক্তি (সার্ভিস কোম্পানি, পরিবহন, আবাসন, ক্যাটারিং ইত্যাদি) সম্পাদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সব চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।

তারা আরও জানান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাসহ সংশ্লিষ্ট সবারই জানা আছে, হজযাত্রীর ভিসা সম্পন্ন করার আগে তাওয়াফা কোম্পানি নির্ধারণ ও সেবার মূল্য পরিশোধ, মিনার জোন নির্ধারণ ও জোনের মূল্য পরিশোধ, ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও হজযাত্রীদের এয়ার টিকেট নিশ্চিত করা, মক্কা-মদিনার বাড়িভাড়া ও বিভিন্ন চুক্তি করার জন্য এজেন্সি মালিকদের মুনাজ্জিম ভিসা করতে হয়। অন্য কোনও ভিসায় লাখ লাখ রিয়াল নিয়ে সৌদি আরবে যাতায়াত, চলাচল করা অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ এবং সৌদি আইন বিরুদ্ধ।

এছাড়া হজযাত্রীদের বায়োমেট্রিক, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মেনেনজাইটিস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা গ্রহণ, পরিবহন চুক্তি এসকল কাজ করার জন্য এজেন্সির সৌদি অ্যাকাউন্টে হজযাত্রী অনুপাতে রিয়াল থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট সব কাজ শেষ হওয়ার পর সৌদি ই- হজ সিস্টেমে ভিসার অপশন ওপেন হয় এবং তখন ভিসা সাবমিট করতে হয়।

কিন্তু এসব কাজের অনেকগুলোই অসম্পূর্ণ থাকা অবস্থায় ২৯ এপ্রিলের মধ্যে ভিসা ইস্যু বন্ধ হয়ে যাওয়ার পত্রটি একদিকে আমাদের যেমন মহা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে, অপরদিকে হজযাত্রীরা চরম অস্থিরতা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন, বলেন এজেন্সি মালিকরা।

এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছু দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো—

অতি দ্রুত বাংলাদেশি সব হাজির মিনার জোন নির্ধারণ করতে হ‌বে; দ্রুত ফাইনাল ফ্লাইট শিডিউল ঘোষণা ও অপারেটিং সব এজেন্সির হজযাত্রী অনুপাতে টিকেট নিশ্চিত করতে হ‌বে; অপারেটিং এজেন্সির মোনাজ্জেমদের জন্য মোনাজ্জেম ভিসার দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে; যাদের সৌদি অ্যাকাউন্টে এখনও রিয়াল জমা হয়নি তাদের অ্যাকাউন্টে দ্রুত সময়ের মধ্যে রিয়াল জমার ব্যবস্থা করতে হবে; মেনেনজাইটিস ও ইনফ্লুয়িঞ্জা টিকা দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে; ভিসা ইস্যু কার্যক্রম অন্যান্য বছরের মতো সর্বশেষ হজ ফ্লাইটের এক সপ্তাহ পূর্ব পর্যন্ত চালু রাখতে হবে।

এজেন্সি মালিকরা বলেন, হজের সব প্রস্তুতি নেওয়ার পরও কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেন, কেউবা মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে যান, বিভিন্ন এক্সিডেন্টের কারণে অনেকে শত ইচ্ছা থাকা সত্বেও হজে যেতে পারেন না। তখন তাদের স্থলে যদি অন্য হাজির ভিসা করা না যায় তবে যিনি হজে যেতে পারলেন না তার সম্পূর্ণ টাকাই গচ্চা যায়।

ভিসা ইস্যু এতো আগে বন্ধ হয়ে গেলে প্রচুর অর্থ অহেতুক সৌদি আরবে চলে যাবে। এতে দেশের অনেক ক্ষতি হবে। বিষয়টি সৌদি সরকারকে বোঝাতে পারলে সৌদি সরকার বাস্তব অবস্থা অবশ্যই বিবেচনা করবেন।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আল কুতুব হজ ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী হাবিবুল্লাহ মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন, আল কাবা ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির মালিক এস এম বরকাতুল্লাহ, মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী, সিন্দাবাদ এয়ারট্রাভেলসের মালিক মো. জামাল হোসেন প্রমুখ।