রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না: সালেহউদ্দিন আহমেদ

দেশের রাজনীতি ঠিক না হলে অর্থনীতি ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, শুধু অর্থনীতির বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হবে না। এখানে রাজনীতির বিষয়টা সবচেয়ে বড়। রাজনীতি ঠিক না হলে  অর্থনীতি ঠিক হবে না। এটা তো আপনারা দেখতেই পারছেন। ভয়ংকর অবস্থা। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত যদি সঠিক না হয়, অর্থনীতি ঠিক হবে না। রাজনীতিটাই মেইন।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবে অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহর আত্মজীবনী ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ বইয়ের পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মাহবুব উল্লাহর আত্মজীবনীর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সে সময় আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল, যারা আমাদের মার দিয়েছে। আমাকেও একবার উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, এনএসএফ নিয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে সহযোগী যারা, তারা এখন প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ। তারা এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। নাম বলবো না, আপনারা অনেকেই জানেন। তারা এখন আমাদের সঙ্গে তর্ক করে— তোমরা কী করেছো? অত্যন্ত দুঃখ লাগে বন্ধু মানুষ তো…। কিন্তু ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেছে কিনা জানি না… মনে হয় না ক্ষমা করেছে। মানুষ নিশ্চয় তাদের ক্ষমা করেনি।

কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক সোহরাব হাসান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শিরিন হক, ডেইলি নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার। এ সময় দর্শক সারিতে বসে আলোচনা শুনেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘‘দেশ আজকে একটা কঠিন সংকটে পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণ কীভাবে হবে, সেটা নিসেন্দেহে ৮/১০টা দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দেখে আমরা নিরূপণ করতে পারবো না। আমাদেরকেই আমাদের পথ চয়ন করতে হবে— নিরূপণ করতে হবে, খুঁজে বের করতে হবে। ঘটনাটা বলি ১৯০৫ সালে রাশিয়ায় যে পাঠ্য বিপ্লব হয়, সেই পাঠ্য বিপ্লবের পরে লেলিন বলেছিলেন, ‘এখন প্রয়োজনে প্রতিক্রিয়াশীলদের মধ্যে ঢুকেও আমাদের কাজ করতে হবে।’ ওই সময়ের জন্য ওটা ছিল একটা মোক্ষম কৌশল। যে কারণে ১৯১৭ সাল (রুশ বিপ্লব) থেকে তারা পেরেছে। এগুলো আমাদের বুঝতে হবে। তবে এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য খুব সীমিত। লক্ষ্যটা হচ্ছে— একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই।  যেই বাংলাদেশে আমরা কথা বলতে পারবো। মুক্তভাবে আমাদের মত প্রকাশ করতে পারবো।’

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংককের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির এমেরিটাস প্রফেসর ড. নুরুল আমিন দেশের বর্তমান ভোট ব্যবস্থা্র প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি। ভোটের দিনটা ছিল উৎসবের দিন। ৫৪ সালে আমি ছোট ছিলাম, কিন্তু যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের কথা কিছু কিছু মনে আছে। আমার বাবা ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন, হাইস্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। ভোটের দিনগুলো আমরা দেখতাম— ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে…এটা যে কীভাবে এখন হারিয়ে গেলো?’

তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ২০১৮ সালে ভোট দিতে সেন্টারে ঢুকতে ছিলাম। আমার স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন, বলে যে, বিএনপিকে যদি ভোট দিতে চান— তাহলে ভোট কেন্দ্রে ঢুকবেন না। এটা আ্মাদের সবচেয়ে বড় লস।’

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার ফলেই বর্তমানে রাজনৈতিক ও ভোট ব্যবস্থায় এই দুরবস্থা বলেও মন্তব্য করেন এই অধ্যাপক।

আরও পড়ুন:

ড. মাহবুব উল্লাহর ‘আমার জীবন আমার সংগ্রাম’ বইয়ের পাঠ উন্মোচন