অজ্ঞান করে সর্বস্ব কেড়ে নিতো বিশ্বজিত

প্রতি দিনই রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্ব হাড়াচ্ছে নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ। বিশেষ করে গণপরিবহনে চলাচল করা সমাজের মধ্যবিত্ত মানুষরাই এই চক্রের কবলে পড়ে মোবাইল-টাকা পয়সাসহ মূল্যবাদ সম্পদ হারাচ্ছে।

গত ১১ মে রাজধানীর মতিঝিলের টিটিপাড়া এলাকায় অজ্ঞান পার্টির দেওয়া পানি পান করে রাস্তায় জ্ঞান হারান নয়ন বিশ্বাস। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন তিনি। এ ঘটনায় ডিএমপি’র শাহজাহানপুর থানা পুলিশ সাভারের আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিশ্বজিত কর্মকার ওরফে নূর মোহাম্মদকে (৪০) গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে নিহতের দুটি মোবাইল ফোন, কাপড় ছাড়াও বিপুল পরিমাণ ঘুমের ওষুধ জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুরে রাজধানীর পল্টনে নিজ কার্যালয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান।

তিনি বলেন, ‘যশোর থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেসে করে গত ১১ মে ভোরে ঢাকার কমলাপুরে আসেন শ্যারন বিশ্বাস ও তার বাবা নয়ন বিশ্বাস। কমলাপুর থেকে সেন্ট জোসেফ স্কুলের শিক্ষার্থী শ্যারন বিশ্বাস মোহাম্মদপুরে উদ্দেশে রওনা দেন এবং  বাবা টিটিপাড়া থেকে গাজীপুরের বাসে ওঠার কথা। এরপর থেকে বাবার আর কোনও খোঁজ পাননি ছেলে।

ডিসি হায়াতুল ইসলাম বলেন, বাবাকে খুঁজে না পেয়ে শাহজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শ্যারন বিশ্বাস। তার জিডির প্রেক্ষিতে নয়ন বিশ্বাসের সন্ধানে নামে পুলিশ। প্রথমে কমলাপুর থেকে টিটিপাড়া পর্যন্ত সড়কের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, নয়ন বিশ্বাস কমলাপুরে থেকে পায়ে হেঁটে টিটিপাড়া এলাকার বাস কাউন্টারের সামনে আসেন। এরপর সেখানে এক ব্যক্তি তার সঙ্গে  কথা বলে। ওই ব্যক্তির দেওয়া পানি পান করেন তিনি। এরপর কমলাপুরে স্টেডিয়ামের সামনে থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া রাইদা পরিবহনের বাসে ওঠেন নয়ন বিশ্বাস। পরবর্তী সময়ে রাইদা বাস চলাচল করা বিভিন্ন রুটের  সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তদন্তকারীরা। তারা জানতে পারেন, ১১ মে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় এক ব্যক্তিকে হাতিরঝিল থানার রামপুরা টিভি গেট এলাকায় নামিয়ে দেন বাসের হেলপার। খবর পেয়ে অচেতন অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৪ মে বিকালে মারা যান নয়ন বিশ্বাস। নিহতের মরদেহ অজ্ঞাত হিসেবে মর্গে রাখা হয়। এ তথ্য পেয়ে নিহতের ছেলে মর্গে গিয়ে তার বাবা নয়ন বিশ্বাসের মরদেহ শনাক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, পরে এ ঘটনায় জড়িত অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্যকে শনাক্তে মাঠে নামেন তদন্তকারীরা। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে নয়ন বিশ্বাসকে অজ্ঞান করে মোবাইলসহ সবকিছু হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় বিশ্বজিত কর্মকার ওরফে নূর মোহাম্মদকে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বিশ্বজিত পুলিশকে জানিয়েছে, ঘটনার দিন ভোরে টিটিপাড়া এলাকায় অবস্থান করে টার্গেটের অপেক্ষা করছিল সে। এমন সময় নয়ন বিশ্বাসকে হেঁটে আসতে দেখে তাকে টার্গেট করে। এরপর কৌশলে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। গাজীপুরের উদ্দেশে বাসে ওঠার আগে নয়ন বিশ্বাসকে পানি খেতে দেয় বিশ্বজিত। এরপর তার সঙ্গে বাসে উঠে পড়ে। বাসটি মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে গেলে নয়ন বিশ্বাসের দুটি মোবাইল ও কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে নেমে যায় বিশ্বজিত। আর অসুস্থ অবস্থায় নয়ন বিশ্বাসকে রামপুরা নামিয়ে দেন বাসের হেলপার।