রাজস্ব আদায়ে সব মাইলফলক অতিক্রম করবো: মেয়র তাপস

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) এপ্রিল মাস পর্যন্ত ডিএসসিসির রাজস্ব আদায় হয়েছে গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) তুলনায় ৫৪ কোটি টাকা বেশি। ফলে চলমান অর্থবছরে আগের সব মাইলফলক অতিক্রম করতে পারবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আদায় করেছে এক হাজার ৩১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।

রবিবার (১৯ মে) ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ তথ্য জানান তিনি। মেয়র শেখ তাপসের দায়িত্বভার গ্রহণের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘উন্নত ঢাকার উন্নয়ন অগ্রযাত্রার চার বছর’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএসসিসি।

মেয়র তাপস বলেন, ‘মেয়র নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি ঢাকাবাসীর ওপর কোনও রকমের করের বোঝা না চাপিয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, গত চার বছরে আমরা কোনও খাতে কোনও কর বৃদ্ধি করিনি। বরং এ সময়ে ২৫টি নতুন খাত সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ১৪টি নতুন খাত থেকে আমরা রাজস্ব আদায় শুরু করেছি। ফলে করোনা মহামারির মতো বৈশ্বিক সংকটের মাঝেও রাজস্ব আদায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ইতিহাস সৃষ্টি করে চলেছে, যা আজ পর্যন্ত অগ্রসরমান।’

তিনি জানান,  ২০১৯-২০ অর্থবছরে করপোরেশনের রাজস্ব আদায় ছিল— মাত্র ৫১৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে যথাক্রমে ৭০৩ কোটি ৩১ লাখ, ৮৭৯ কোটি ৬৫ লাখ ও এক হাজার ৩১ কোটি ৯৭ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত যে রাজস্ব আদায় হয়েছে— তা আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫৪ কোটি টাকা বেশি। ফলে চলমান অর্থবছরে আমরা আগের মাইলফলক অতিক্রম করতে পারবো বলে আশাবাদী।'

মেয়র বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এক সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও তাদের জিপিএফ-সিপিএফের লভ্যাংশ, ঠিকাদারদের বকেয়া, ডিপিডিসি-ওয়াসা-তিতাস গ্যাসসহ সেবা সংস্থাগুলোর বকেয়া পাওনা দীর্ঘদিন পরিশোধ করতে পারেনি। সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সবার সহযোগিতায় এবং আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকার ফলে আমরা প্রায় সব বকেয়াসহ পাওনা পরিশোধ করেছি। একইসঙ্গে করপোরেশনের প্রায় সব গাড়ির নিবন্ধন করেছি। দীর্ঘ ৫০ বছরের ভূমি উন্নয়ন করসহ অন্যান্য পুঞ্জীভূত বকেয়া পাওনাদিও আমরা পরিশোধ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আগের সব উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য করপোরেশনকে প্রকল্পনির্ভর থাকতে হতো। কিন্তু রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ঢাকাবাসীর কল্যাণে অনেক উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এখন আর প্রকল্পনির্ভর থাকতে হয় না। গত চার বছরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে এক হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি নানাবিধ অবকাঠামো নির্মাণ, উন্নয়ন ও সংস্কার করেছে।'’

ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘রাস্তা-মার্কেটের দোকান, অলি-গলি, কাঁচাবাজার, পথচারীদের হাঁটার পথ, নর্দমা এমনকি নদী-নালায়ও ভূমিদস্যুরা পাকাপোক্ত আস্থানা গেড়ে বসেছিল। দখলদারিত্ব যেন নিয়মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আমরা কঠোরতা দেখিয়ে চলেছি এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অনমনীয় মনোভাব আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে। আমরা যেমন দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের বেইজমেন্ট, নিউ সুপার মার্কেটসহ অনেকগুলো মার্কেটের নকশাবহির্ভূত দোকান নির্মাণকারী অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেছি, তেমনই দখলমুক্ত করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল ঘিরে গড়ে ওঠা ১৫৫টি স্থাপনা। আমরা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১০ তলা ভবন, পান্না ব্যাটারি ও ম্যাটাডোর বলপেনের অবৈধ বর্ধিতাংশসহ কয়েক ডজন অবৈধ বহুতল ভবন ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছি।’

মেয়র বলেন, ‘সামষ্টিকভাবে বলতে পারি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অটল, অদম্য ও অনমনীয় কর্মোদ্যোগের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকাবাসীর আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে যে সংস্থা একসময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতো, সে সংস্থা আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে।’