আগুনে পুড়লে অবকাঠামোর উন্নতি হয়, বস্তি নিরাপদ হয় না

রাজধানীর মহাখালীর টিএনটি মাঠ-সংলগ্ন বাইদা বস্তিতে চলতি বছরের ২৪ মার্চ ঘটে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা। এতে বস্তির প্রায় ৯০ শতাংশ ঘর পুড়ে যায়। তবে দুই মাস যেতেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন বস্তিবাসী। টিনের ঘরের বদলে নির্মিত হচ্ছে পাকা ঘর। এক দশক আগেও এই বস্তিতে আগুন লেগে সব ঝুপড়িঘর পুড়ে যায়। তখন ঝুপড়ির বদলে নির্মাণ করা হয়েছিল টিনের ঘর।

এভাবে প্রতিবার আগুন লাগলে অবকাঠামোর উন্নতি হয়, কিন্তু বস্তি আর নিরাপদ হয় না। আগের মতোই থেকে যায় অগ্নিঝুঁকি। ফলে আবার সব হারানোর শঙ্কা নিয়েও নিরুপায় দিন পার করেন অসহায় এসব মানুষ।

অবৈধভাবে টানা গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে সোমবার (২৭ মে) আগুনের ঘটনা ঘটে বাইদা বস্তিতে। তবে ভারী বৃষ্টি হওয়ায় তা বড় আকার ধারণ করতে পারেনি। দ্রুত আগুন নিভিয়ে ফেলতে সক্ষম হয় বস্তিবাসী। শুধু বাইদা নয়, কড়াইলসহ এই এলাকার সব বস্তির চিত্র একই। বারবার আগুনে পুড়লেও নিরাপত্তাজনিত উদ্যোগ নেওয়া হয় না কোনও বস্তিতেই। বরং বস্তিতে দিন দিন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে ঝুঁকিও।

বুধবার (২৯ মে) মহাখালীর টিএনটি এলাকার কড়াইলসহ আশপাশের তিনটি বস্তি ঘুরে দেখা যায়, জালের মতো ছড়িয়ে আছে অবৈধ গ্যাস লাইন। ঘরগুলোতে বিদ্যুতের লাইন টানা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে। বসতঘরের ভেতরেই চলছে রান্নার কাজ। টিনের ঘরের ভেতরে টিভি-ফ্রিজ সবই আছে। কেউ কেউ আধুনিক বিদ্যুতের চুলাও ব্যবহার করছেন। তবে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব নেই বস্তিবাসীর।

এ বিষয়ে কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অগ্নিনিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করতে হয়, সে সম্পর্কে তাদের কোনও ধারণা নেই। বিভিন্ন এনজিও ও সংস্থা থেকে স্যানেটারি ও স্বাস্থ্যের বিষয়ে গুরুত্ব দিলেও, ঝুঁকিপূর্ণ বসতঘরে কীভাবে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়, তা নিয়ে নেই কোনও কার্যক্রম।

গত মার্চের অগ্নিকাণ্ডে বাইদা বস্তিতে ২০০-এর মতো ঘর পুড়ে গেছে। সেখানে বড় অংশে এক রুমের ইটের ঘর তুলছেন ইদ্রিস আলী নামের এক ব্যক্তি। এতে তার খরচ পড়েছে প্রায় লাখ টাকা। নতুন ইটের ঘর তোলা ছাড়া বাকি সবকিছুই আগের মতো আছে বলে জানিয়ে ইদ্রিস বলেন, ‘জানি এটা সরকারি জায়গা। গত ২০ বছর ধরে আছি, কেউ সরায় নাই। সেই ভরসায় এবার পাকা ঘর তুললাম।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘর নতুন কিন্তু গ্যাস ও বিদ্যুৎ লাইন আগেরই। আগুন লাগলে কী করার আছে? আমরা নিজেরাই আগুন নেভাতে চেষ্টা করি। তবে ফায়ার সার্ভিসের লোক এলে ক্ষতি কম হয়।’

মাসনবি নামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আগুনের ঝুঁকি তো আছেই। এমনিই থাকতে হবে। দুই দিন আগেও আগুন লাগছিল। বৃষ্টি ছিল, তাই ক্ষয়ক্ষতি হয় নাই।’

গরিবের সবই ঝুঁকি জানিয়ে কড়াইল বস্তির বাসিন্দা জুলি বলেন, ‘এর আগেও আগুন লাগছে, ক্ষতি হইছে। আবার নতুন করে ঘর তুইল্লা থাকতাছি। এভাবেই তো চলে। ক্ষতি হইলে কী আর করার! এইখান থেকে আমাদের অন্য জায়গায় যাওয়ার জায়গা নাই।’

ডিএনসিসির আওতাধীন ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নাছির বলেন, ‘বস্তিগুলো গণপূর্তের জমির ওপর। এই বস্তিগুলোকে কী করা হবে তারা জানে। তবে কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সমাধানে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করি। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন থেকেও অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’

বস্তিগুলোয় অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

গত বছরের ১৮ মে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে সমন্বিত কমিউনিটি অগ্নিনির্বাপণ ও পানি সরবরাহব্যবস্থার আওতায় ফায়ার হাইড্রেন্টের উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘যেকোনও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ফায়ার হাইড্রেন্ট বসাতে হবে। আগে আমাদের কোনও বস্তিতে ফায়ার হাইড্রেন্ট বসাতে পারিনি। সাততলা বস্তি দিয়ে শুরু করলাম। পর্যায়ক্রমে অন্য বস্তিতেও ফায়ার হাইড্রেন্ট বসানো হবে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীকে।’