মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে। আদালতের রায়ের পরও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা বাতিলে আন্দোলনের মাধ্যমে এটি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রজন্ম, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল নামের একটি সংগঠন। আন্দোলনের নামে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারগুলোকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রল (উপহাস) করা হচ্ছে বলেও বলেন তারা।
বুধবার (১২ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, অপপ্রচার ও বাস্তবতা’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রজন্ম, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রজন্ম, কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ও কোটার পক্ষে রিটকারী অহিদুল ইসলাম তুষার।
এসময় তিনি বলেন, এদেশে নানা বৈষম্যর কারণে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। তবে এখন সরকারি চাকরির নিয়োগে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে যে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, তাদের প্রজন্মের জন্য শুধু চতুর্থ শ্রেণির চাকরি দিতে কোটা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে চাকরি দিতে চাচ্ছে একটি গোষ্ঠী। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের প্রথম শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে দেখতে চায় না সেই গোষ্ঠী। কোটা আন্দোলনের পর যখন কোটা ব্যবস্থা বন্ধ নিয়ে আদালতে রায় দেওয়া হয়েছিল, তখন আমরা আমাদের পক্ষ থেকেও আদালতে যাওয়া হয়।
তিনি বলেন, আদালতে রায়ের পর ২০১৮ সালে ৪ অক্টোবর ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড এবং ২০২০ সালে ১ম থেকে ৮ম গ্রেডে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তখন মিডিয়ায় প্রচার করা হয় শুধু ১ম ও ২য় শ্রেণির পদে কোটা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু পরিপত্রে দেখা গেলো প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ৩টি গ্রেড ১১, ১২, ১৩তম পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। কেননা প্রথম শ্রেণি শুধু ৯ম গ্রেড, দ্বিতীয় শ্রেণি শুধু ১০ম গ্রেড এবং তৃতীয় শ্রেণি ১১-১৬তম গ্রেড ও চতুর্থ শ্রেণি ১৭-২০তম গ্রেড। অর্থাৎ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কথা বলে তৃতীয় শ্রেণির আংশিক কিছু পদে কোটা বাতিলের ঘটনা খুব পরিকল্পিত। তৃতীয় শ্রেণির গ্রেডগুলোতে জনবল সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক যাতে সরকারি চাকরিতে না বাড়ে সে জন্য এ শ্রেণিগুলোতেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়।
তিনি আরও বলেন, যারা কোটার বিপক্ষে ছিলেন সেটা ছিল তাদের আন্দোলন, এখানে আমাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু কোটার পক্ষে আমরা দাবি নিয়ে আদালতে যাই। আদালত আমাদের বিষয়েও রায় দিয়েছে। কিন্তু তারপরও যারা এই কোটার জন্য আদালতের রায়ের পরও আন্দোলন করছে তারা আদালতের রায়ের প্রতি অবমাননা করছে। রায় হওয়ার পরও কেন আন্দোলন হবে— এখানে সুপরিকল্পিতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের পেছনে একটি গোষ্ঠী কাজ করছে।
কোটা প্রথা কখনই বৈষম্যময় নয়। আমাদের সমাজে একটি প্রচলিত ভুল ধারণা আছে যে কোটা প্রথায় যারা চাকরি নেয় তাদের মেধা যাচাই ছাড়া চাকরি দেওয়া হয়। কোটায় যারা চাকরি নেন তাদেরও অন্য সব চাকরির প্রার্থীর মতোই মেধা যাচাই করা হয়। অন্য কোনও কোটা থাকলে সমস্যা নেই, শুধু সমস্যা মুক্তিযোদ্ধা কোটায়, বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জামালউদ্দিন সরকার, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল হক প্রমুখ।