যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে লেবার পার্টির দুই নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার এবং জোনাথন অ্যাশওয়ার্থ বাংলাদেশিদের নিয়ে ‘উদ্বেগজনক’ মন্তব্য করেছেন অভিযোগ করে তা দ্রুত ‘সম্পূর্ণভাবে’ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) এবং বেঙ্গলিনেস রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)। একইসঙ্গে এই দুই নেতাকে ‘আন্তরিক ও নিঃশর্ত’ ক্ষমাপ্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধের ভুক্তভোগীদের পক্ষে কর্মরত বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত স্বাধীন বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক।
বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের এই ধরনের ‘সংকীর্ণ মন্তব্য’ এমন একটি সম্প্রদায়কে আলাদাভাবে চিহ্নিত করেছে, যারা ব্রিটিশ সমাজ এবং তার অর্থনীতিতে, বিশেষত এর সরকারি সেবাগুলোতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। উপরন্তু, আধুনিক ব্রিটেনও অনেকাংশে গড়ে উঠেছে ঐতিহাসিক বাংলা অঞ্চল থেকে আহরিত সম্পদ দ্বারা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্রিটেনের ইতিহাসের ন্যায্যতম সময়ে, লাখো বাঙালি সেনা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। সেই সঙ্গে নিজের জনগোষ্ঠীকে বিপদের মুখে রেখেও বাংলা বিপুল সম্পদ এবং খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে যুদ্ধে অবদান রেখেছে, যার ফলাফল ছিল একটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, যা লাখ লাখ বাঙালির মৃত্যু ঘটিয়েছিল।
ফ্যাসিবাদের পরাজয়ের আট দশক পর, বর্তমান ব্রিটিশ রাজনৈতিক নেতৃত্বের মুখে সেই একই ধরনের ফ্যাসিবাদী বার্তা শুনতে পাওয়াটি প্রবলভাবে ‘উদ্বেগজনক’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, স্টারমার এবং অ্যাশওয়ার্থের এই মন্তব্য তাদের নিজেদের ইতিহাসের ব্যাপারেই কৃতজ্ঞতাহীনতা এবং অজ্ঞতার পরিচায়ক।
বিবৃতিতে ভলা হয়, একই রাজনৈতিক দলের দু’জন শীর্ষ নেতা যখন একই নৃগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, একইধরনের জাতিবাদী সরলীকরণ পুনরাবৃত্তি করে এবং উভয়ই তাদের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কোনও সুস্পষ্ট ক্ষমাপ্রার্থনা এবং তা প্রত্যাহারের আন্তরিক প্রচেষ্টা এড়িয়ে গেছেন। তখন তা লেবার পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের একটি অংশের মধ্যে গড়ে ওঠা ‘বাঙালিবিদ্বেষ’ এর সূচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তা যদি নাও হয়, অন্ততপক্ষে এটি কাকতালীয় একটি সাঙ্ঘাতিক রাজনৈতিক ভুল তো বটেই।
এধরনের ‘মারাত্মক ভুল’ যাতে না হয় এবং তার প্রায়শ্চিত্তের দলের সদিচ্ছা স্পষ্ট করতে হলে, লেবার পার্টিকে অনতিবিলম্বে ব্রিটেনের ঔপনিবেশিক অতীতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের উপায় নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়। এতে আরও উল্লেখ করা হয়, তা না করে, কমিউনিটি টিভি চ্যানেলে হাজির হয়ে ‘লেবার এবং বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সম্পর্কের’ ক্লিশে উদ্ধৃতি পুনরাবৃত্তি করে যে ‘উদ্বেগ’ স্যার স্টারমার ব্যক্ত করেছেন, তা কেবলমাত্র ঠুনকো ‘কথার কথা’ হিসাবেই বিবেচিত হবে। তাই, আমরা স্যার কিয়ার স্টারমার এবং জোনাথন অ্যাশওয়ার্থকে তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে এবং আন্তরিক ও নিঃশর্ত কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশিদের নিয়ে ‘অযাচিত মন্তব্য’ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীর