ঢাবির হলে হলে আতঙ্ক, কোটা আন্দোলনে গিয়েছে সন্দেহ হলেই মেরে হল ছাড়া

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় সোমবার (১৫ জুলাই) দুপুর ৩টা থেকেই আতঙ্ক বিরাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাত ৯টার সেই সংঘাত থামলেও এখনও হলে হলে বিরাজ করছে আতঙ্ক। সন্ধ্যার পর থেকেই হলে হলে তল্লাশি চালাচ্ছে ছাত্রলীগ। কোটা সংস্কার আন্দোলনে গিয়েছে বা এ সম্পর্কিত ছবি বা পোস্ট করেছে তা নিশ্চিত হতে পারলে বা সন্দেহ হলে মেরে হল ছাড়া করছে আন্দোলনকারীদের। বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা এই অভিযোগ করেছেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়া ও আন্দোলনের ছবি পোস্ট করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ছয় শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেছে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা। তিন জনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

মারধরের শিকার ভুক্তভোগীরা হলেন- ২০২০-২১ সেশনের আব্দুল বাসিত, শাখাওয়াত হোসেন সাকু, লিমন খান রানা, মোর্শেদ ইসলাম। ২০১৬-১৭ সেশনের ফারুক ও তাওহীদ ইসলাম এবং ২০১৭-১৮ সেশনের হাসিবুল ইসলাম হাবিব।

এফআর হলের ৩০৯ নম্বর রুম থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের হেদায়েত এবং ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেনের বেড-বই খাতা বাইরে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাখাওয়াত ও বাসিতকে অনেক বেশি মারধর করা হয়েছে। শাখাওয়াতকে রুমে গিয়ে মারা হয়েছে। আর বাসিতকে হাসপাতালে যাওয়ার পথে ফোন চেক করে বেধড়ক মারধর করা হয়।

লিমন, শাখাওয়াত ও মোর্শেদকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসময় ছাত্রলীগের সব গ্রুপের পদপ্রত্যাশীরা উপস্থিত থেকে তাদের মারধর করে। এছাড়াও হলের অনেকের ফোন চেক করেছে তারা।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি, মারধরে অংশ নেওয়া পদপ্রত্যাশীরা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী নাহিদ, ইমরান, আসিফ, শুভ, নুহাস ও আলিফ। সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের অনুসারীরা হলেন- শাহারাত, নাসিফ, শওকত, রিফাত ও লিয়ন। ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি শয়নের অনুসারীদের মধ্যে ছিলেন ফজলে রাব্বি এবং সাধারণ সম্পাদক সৈকতের অনুসারীদের মধ্যে ছিলেন লালন।

একই ঘটনা ঘটেছে বিজয় একাত্তর হলেও। এই হলের মারধরের ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী মিলে একজনকে মারধর করতে দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেসব শিক্ষার্থীই সন্ধ্যার পরে হলে ঢুকছেন তাদের ফোন চেক করা হচ্ছে, জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে কোনও শিক্ষার্থীর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে বা ওই শিক্ষার্থী আন্দোলনে গিয়েছিল এমন সন্দেহ হলে তাকে মারধর করা হয়।

প্রবেশ করার সময় হলের শিক্ষার্থীদের এমন মারধর করার বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে জানানো হয়। পরে রাত ১১ টা ৪০ মিনিটের দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল, প্রো-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শীতেশ চন্দ্র বাছার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী বিজয় একাত্তর হলে আসেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে তাদের হলে প্রবেশ করতে দেখা যায়। ভিডিওটি বিজয় একাত্তর হলের হলেও সেখানে উপস্থিত থাকা বিজয় একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তা অস্বীকার করেন। তখন উপাচার্য হলের প্রাধ্যক্ষ ও আবাসিক শিক্ষকদের সতর্ক থাকার কথা বলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। পদপ্রত্যাশীরা কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়া আরও শিক্ষার্থীদের মারধরের জন্য খোঁজ-খবর নিচ্ছে। অনেকেই হল ছেড়ে বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছেন।