মোহাম্মদপুরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা: মামলার প্রস্তুতি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকার এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ বলছে, নিহতের স্বজন ও পুলিশ সদস্যরা হত্যার সঙ্গে জড়িতে সদস্যদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই মামলা দায়ের করা হবে।

এর আগে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে রায়েরবাজার এলাকার ‘সাদেক খান কাঁচাবাজারের’ স্থানীয় দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে নিহতরা হলেন নাসির (৩০) ও মুন্না (২২)। এদের মধ্যে নাসির ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং মুন্না সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দুজন নিহতের ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি। তবে দ্রুতই মামলা করা হবে, এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জড়িতদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করতে আমাদের ফোর্সসহ নিহতের স্বজনরা এ বিষয়ে কাজ করছেন। 

ওসি আরও বলেন, ‘মুন্নার নামে সাত-আটটি মামলা রয়েছে। তবে নাসিরের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড দুটি সংঘটিত হয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।'

এদিকে নিহত নাসিরের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার বালিগ্রামের শাহ আলম বিশ্বাসের ছেলে। রায়েরবাজার বারৈইখালী এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ।

নাসিরকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন শাওন নামে এক যুবক। তিনি নিজেও এ ঘটনা আহত হয়েছেন। তার দাবি, এ ঘটনায় কোনও গ্রুপের সঙ্গেই তাদের সম্পৃক্ততা নেই।

শাওনের ভাষ্য, ‘আমার মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকান রয়েছে। সন্ধ্যার দিকে নিজ এলাকা থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হচ্ছিলেন। ওই সময় নাসির আমাকে বলেন কোন দিকে যাবেন। আমিও সেদিকে যাবো, আমাকে নামিয়ে দিয়েন- এই বলে আমার পেছনে ওঠে। আমি যাচ্ছিলাম, পথিমধ্যে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে সাদেক খান কাঁচামালের আড়তের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একদল অস্ত্রধারী আরেক গ্রুপের লোকজন কে ধাওয়া করছিল। তখন তাদের কয়েকজন বলছিল, এই যে একজনকে পেয়েছি, এই বলে আমাদের মোটরসাইকেলের পেছনে দৌড়ে এসে নাসিরকে কোপ দেয়। ভয়ে নাসির নেমে দৌড় দেয়, পরে তারাও পিছু নিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে। আমি এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করায়, আমাকেও মারধর করে। পরে তাকে উদ্ধার করে সিকদার মেডিক্যাল হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এলে রাত ৮টায় মারা যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাঁচামালের আড়তের ভেতরে দেখা গেছে বেশ কিছু ছেলে ছুরি-দা হাতে। আরেক গ্রুপ বাইরে অবস্থান করছে। সেখান কিছু সময় পর পর ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছিল। সেখানকার আড়তদারের কাছে জিজ্ঞাসা করলেই খবর পাবেন।’

নিহতের বড় ভাই ইসলাম বিশ্বাস জানান, তার ভাই নির্মাণাধীন কাজে লেবার-সুপারভাইজারের কাজ করতো। তিনি মূলত দিনমজুর ছিলেন। 

তিনি বলেন, বিকালে সে বাসা থেকে বের হয়েছিল। পরে খবর পাই, তাকে ১০ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী কুপিয়েছে। পরে এসে গুরুতর আহত অবস্থায় পাই, ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাসুদ আলম বলেন, নাসিরের লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় জরুরি বিভাগের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে মারা যান।