দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পাওয়ার পর সম্প্রতি এক আলোচনায় অংশ নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ভোটে অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে কথা বলেন। সেখানে খোলামেলা বক্তব্য দিতে গিয়ে ‘ভাইরালের শিকার হয়েছিলেন’ বলে অভিযোগ করেন তিনি। ব্যক্তিগতভাবে সবসময় খোলামেলাভাবে কথা বলতে পছন্দ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ভাইরাল হওয়ার যে দৌরাত্ম্য; সম্প্রতি খোলামেলা কথা বলে আমি সেটার শিকার হয়েছি।’
শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর সিরডাপে ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কেমন চাই?’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত এ সেমিনারে অন্তর্বর্তী সরকারের ও পাট এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আরিফুর রহমান আদিব ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান প্রমুখ অংশ নেন। পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সমাজের প্রতিনিধারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত এক ছায়া সংসদ বিতর্কে অংশ নিয়ে দেওয়ার বক্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে কিনা- এমন প্রশ্নে যেটা উত্তর দিয়েছিলাম, আমি খোলামেলা ওই অবস্থান থেকে কথা বলেছি। এখন তো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পলায়নপর, তারা মাঠে নেই। তারা যদি সংগঠিত হতে না পারে; তারা যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে; তাদের যতি ন্যূনতম বাধা না দেওয়া হয়— তখন নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না। কিন্তু এটাকে (বিকৃত) করা হয়েছে যে— আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।
তিনি এসময় প্রচলিত কৌতুকের উদাহরণ দেন। বলেন, লেখা থাকে— এখানে প্রস্রাব করিবেন না, করিলে ৫০ টাকা জরিমানা। অথচ ‘না করিলে ৫০ টাকা জরিমানা’, আমি এটার শিকার হয়েছি।
সাংবাদিকরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
নির্বাচনকে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন বলেন, ‘ভোটার তালিকা থেকে শুরু করে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পুরো প্রক্রিয়া সঠিক ও জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।’
ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল বলেও মনে করেন তিনি। ১৯৯১ এর নির্বাচনে রাজনৈতিক ঐকমত্য ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে আচরণবিধি প্রণয়ন করে তারা এটা পালন করেছে। সবাইকে ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলেরই এগিয়ে আসতে হবে।’
সংস্কার কমিশন নিরপেক্ষ, সততা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে প্রস্তাব দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাতে এত প্রাণের রক্তের সঙ্গে কোনও বিশ্বাসঘাতকতা করা যেন না হয়।’
তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগ সংস্কার কমিশনের এখতিয়ার নয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সরকারের এখতিয়ার। মতামতের মাধ্যমে যেন সরকার সঠিক সিদ্বান্ত নেয়।’