পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মজুরি ও সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর তাগিদ

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মজুরি, জীবনমান, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা এবং তাদের সামাজিদ মর্যাদা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলায় হরিজনরা অনেক অবহেলিত। অন্যান্য পেশার মতো তাদের সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। তারা নানাভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন। অথচ তাদের ছাড়া একটি সভ্য সমাজ চিন্তা করা কঠিন। ফলে হরিজনদের বেতন বৃদ্ধি এবং সামাজিদ মর্যাদা বাড়ানোর তাগিদ দেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানী সিরডাপ মিলনাতনে ‘পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজের নিশ্চয়তা, মজুরি বৈষম্য ও সামাজিক মর্যাদা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তরা এসব কথা বলেন। নাগরিক উদ্যোগ ও বাংলাদেশ স্যানিটেশন ওয়ার্কার্স ফোরাম এ সভার আয়োজন করেন।

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সভায় হরিজনদের নিয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। লালমনিরহাট, মৌলভীবাজার, খুলনা এবং ভোলা জেলার মোট ১৬৬ জন (পুরুষ- ৯১, নারী- ৭৫) স্যানিটেশন কর্মীর কাছ থেকে নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন তরুণ গবেষক ফারহান হোসেন জয়।

সভায় ব্লাস্টের পরিচালক (লিগ্যাল) মো. বরকত আলী বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সামাজিক স্বীকৃতি নেই। পুনর্বাসন ছাড়া তাদের উচ্ছেদ করা যাবে না। চলতি বেতন স্কেলের ২০তম গ্রেডে ৮ হাজার ২৫০ টাকা বেতন, আনুষঙ্গিক মিলে প্রায় ২০ হাজার টাকা পান একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। অথচ পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

যে নামমাত্র মজুরি বা বেতন পান, তার সঙ্গে এটির আকাশ-পাতাল তফাৎ। সরকারি আইন সহায়তা সংস্থার মাধ্যমে তাদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ হরিজন ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণা লাল বলেন, আমরা এখনও অনেকটা দাস হিসেবে আছি। পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিযুক্ত করলেও আমাদের দিয়ে কুলির কাজও করানো হয়। কর্তৃপক্ষের আদেশের চাপেই আমাদেরকে বিগত সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের

 গেজেট হলেও তার বাস্তবায়ন নেই। সিটি করপোরেশন ভেদে নিয়োগ, মজুরি ও সুবিধাদিতে বৈষম্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এর সমাধান হওয়া প্রয়োজন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে তাদের বঞ্চনা ও অবহেলা প্রত্যক্ষ করেছি। অদূর ভবিষ্যতে চলমান সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিল্স) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সবাইকে উপনিবেশিক ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শ্রম সংস্কার কমিশন তার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও আন্তরিকতার সঙ্গে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংশ্লিষ্ট দাবি ও সুপারিশ বিবেচনা করবে। একইসঙ্গে তাদের জায়গা থেকে যৌক্তিক ও ন্যায্য দাবি আদায়ে মাঠের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আশা করছি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী তথা দলিত-হরিজনদের প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য ও বঞ্চনার অবসান হবে।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন, কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর (কাপ) এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) পরিচালক (লিগ্যাল) মো. বরকত আলী, সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর (ইউনিভার্সাল অ্যাক্সেস) মো. মামুন চৌধুরী, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলনের (বিডিইআরএম)  সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাস।