X
মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

পোশাক খাতে ঘোষিত নিম্নতম মজুরি পুনর্বিবেচনার আহ্বান টিআইবির

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৮:৪৪আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৫৭

তৈরি পোশাক খাতের ঘোষিত নিম্নতম মজুরি বৃদ্ধির হার শুভঙ্করের ফাঁকি বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ইতোমধ্যে ঘোষিত নিম্নতম মজুরি পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দিয়ে মজুরি বোর্ডকে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মোট মজুরি ৫২ থেকে ৫৬ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তবে বৃদ্ধির হার ২৫ থেকে ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কাছে নিজেদের এমন বিশ্লেষণ উপস্থাপন করেছে টিআইবি। নিম্নতম মজুরি বোর্ড চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠি ও বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে— বছরে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময়মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকদের মজুরি প্রকৃত অর্থে ৩০ শতাংশও বাড়েনি। পোশাকশ্রমিকদের জীবনমান, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নির্ধারিত মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত নিম্নতম মজুরি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানায় তারা। 

নিম্নতম মজুরি বোর্ডকে পাঠানো চিঠিতে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত নিম্নতম মজুরি কাঠামো অনুযায়ী, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বাড়ানোর নির্দেশনা রয়েছে। সে হিসাবে পূর্ববর্তী গ্রেড সাত বা নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে মূল মজুরি ন্যূনতম ৫ হাজার ২৩২ টাকা ৭৫ পয়সা হওয়ার কথা। এই গ্রেডে প্রস্তাবিত নতুন মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ এই গ্রেডে মূল মজুরি ৬৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে বেড়েছে ২৮ দশমিক শূন্য চার শতাংশ। গ্রেড চারের ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধির হার ২৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড তিন, দুই ও এক-এর ক্ষেত্রে মূল মজুরি প্রকৃত বৃদ্ধি পাবে ২৪ দশমিক ১৬ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ এবং ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রতিবছর মূল মজুরি ৫ শতাংশ হারে বাড়লে ২০২৩ সালে এসে নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ন্যূনতম মোট মজুরি হওয়ার কথা ৯ হাজার ৬৯৯ টাকা ১৩ পয়সা। নতুন প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী— এই গ্রেডে সর্বমোট মজুরি প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ, ৫৬ শতাংশ সর্বমোট মজুরি বাড়ানো হয়েছে বলা হলেও মূলত বেড়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ ৮৮ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড চার, তিন, দুই ও এক- এর ক্ষেত্রে মোট মজুরি বৃদ্ধির হার যথাক্রমে মাত্র ২৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ২৫ শতাংশ ৫৮ শতাংশ, ২৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং ২৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। 

আবার মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার আরও কম। মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করা হলে পঞ্চম গ্রেডে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মূল মজুরি হওয়ার কথা ৫ হাজার ৫৭২ টাকা ২৬ পয়সা। যেখানে নতুন প্রস্তাবিত মূল মজুরি ৬ হাজার ৭০০ টাকা।  অর্থাৎ মূল মজুরি ৬৩ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে বলা হলেও তা মূলত বাড়ছে ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড চার, তিন, দুই ও এক- এ মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৮১ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ১৬ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ। সর্বমোট মজুরির হিসাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে একজন শ্রমিকের ৯ হাজার ৯১৩ টাকা ৫০ পয়সা পাওয়ার কথা। সর্বমোট মজুরি এই গ্রেডে ৫৬ শতাংশ বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে বলা হলেও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে সর্বমোট মজুরি বৃদ্ধির হার মাত্র ২৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় গ্রেড চার, তিন, দুই ও এক-এ প্রকৃত মজুরি বৃদ্ধির হার ২৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, ২২ দশমিক ৮০, ২২ দশমিক ৫৫ শতাংশ এবং ২৩ দশমিক ১০ শতাংশ।

অপরদিকে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, মূল মজুরি সর্বমোট মজুরির ৬০ শতাংশ ধরা হলেও বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মজুরি কাঠামো অনুযায়ী— সেটা ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে বছর প্রতি ৫ শতাংশ মূল মজুরি বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হলেও সামনের দিনে তুলনামূলক কম মজুরি বাড়বে শ্রমিকদের। যা এই মজুরি কাঠামোর বড় দুর্বলতা।

এমন সব বাস্তবতায় শ্রমিকদের মজুরি ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে— এমন হিসাবকে শুভঙ্করের ফাঁকি উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সামগ্রিক বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকদের নতুন প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি জীবনধারণের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী, নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রমিক ও তার পরিবারের প্রয়োজন, দেশের সাধারণ মজুরি কাঠামো, জীবনযাপনের ব্যয় এবং এ সংক্রান্ত পরিবর্তন, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবিদের জীবনযাত্রার মান এবং অর্থনৈতিক বিবেচ্য, বিশেষ করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা এবং উচ্চ কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়গুলো মাথায় রাখার কথা বলা হয়েছে। নতুন মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনগুলো কী আকারে বিবেচনা করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। বরং শ্রমিকের  ন্যূনতম জীবনমান ও প্রয়োজন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে জীবনযাপন ব্যয় ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো মোটেই গুরুত্ব পায়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।’

/জেইউ/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন’ অনুমোদন নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
বিপরীতমুখী অনড় রাজনীতিতে হেরে যাচ্ছে মানুষ: টিআইবি
তাজরীন ফ্যাশন্সে শ্রমিক হত্যার ১১ বছর: দেলোয়ারের বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি
সর্বশেষ খবর
মিত্রদের ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান ন্যাটো মহাসচিবের
মিত্রদের ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান ন্যাটো মহাসচিবের
রাজধানীর আসনগুলোতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে ২০ রাজনৈতিক দল
রাজধানীর আসনগুলোতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছে ২০ রাজনৈতিক দল
একতরফা নির্বাচন বর্জন ও রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান বাম নেতাদের
একতরফা নির্বাচন বর্জন ও রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান বাম নেতাদের
নৌকা না পেলেও দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছেন প্রতিমন্ত্রী, ছেলে স্বতন্ত্র
নৌকা না পেলেও দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র তুলেছেন প্রতিমন্ত্রী, ছেলে স্বতন্ত্র
সর্বাধিক পঠিত
মনোনয়ন পেয়েছেন সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী
মনোনয়ন পেয়েছেন সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী
মেথি খেলে মিলবে যে ৮ উপকারিতা
মেথি খেলে মিলবে যে ৮ উপকারিতা
ভারতের হারে ‘উল্লাস’: চঞ্চলে উত্তেজনা, মোশাররফে স্বস্তি!
ভারতের হারে ‘উল্লাস’: চঞ্চলে উত্তেজনা, মোশাররফে স্বস্তি!
বদলে যাচ্ছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সূচি, কমবে ভ্রমণসময়
বদলে যাচ্ছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের সূচি, কমবে ভ্রমণসময়
ভারতে মুসলিম সেজে অপরাধে জড়ানোর প্রবণতা কেন বাড়ছে?
ভারতে মুসলিম সেজে অপরাধে জড়ানোর প্রবণতা কেন বাড়ছে?