দেশব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ শেষ হচ্ছে বুধবার

দেশে তারুণ্যের শক্তিকে উজ্জীবিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আয়োজিত এক মাস ২০ ব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব-২০২৫’ শেষ হচ্ছে আগামী বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি)। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই উৎসবের প্রতিপাদ্য ছিল ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই।’ তারুণ্যের এই উৎসবের মাধ্যমে তরুণদের মধ্যে ঐক্যের প্রকাশ ঘটানো, সহযোগিতার নীতি প্রচার করা হয়েছে। উদ্যোক্তা-কর্মী হিসেবে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে যাতে তারা দেশের সম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠতে পারে সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। 

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে জানানো হয়, ছোট ছোট সৃষ্টিশীল উদ্যোগের মাধ্যমে সারা দেশে গ্রাম থেকে শহর, প্রান্তিক ও অনগ্রসর হতে অগ্রসর সব এলাকায় সব শ্রেণি-পেশার তরুণ-যুবদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে উদযাপিত হয়েছে এই উৎসব। এই উৎসবের মাধ্যমে গ্রাম, শহর, সুবিধাপ্রাপ্ত-সুবিধাবঞ্চিত সব শ্রেণির তরুণ-যুবদের মাঝে সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত মূল্যবোধ প্রচার করা হয়েছে। তরুণদের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা ও অজানা সম্ভাবনা আছে সে সম্পর্কে সচেতন করার বিভিন্নরকম কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কার্যক্রম তরুণদের উজ্জীবিত করতে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।

প্রেস উইং জানায়, স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও বিভাগে প্রতিদিন তারুণ্যের উৎসবের শত শত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে কমপক্ষে ২৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭১ জন নারী, ৪৪ লাখ ২৪ হাজার ৩০২ জন পুরুষসহ মোট ৭১ লাখ ৬৬ হাজার ৪৭৩ জন তরুণ-যুবক প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছে। মোট ১৩ হাজার ৭১১টি ইভেন্টের মধ্যে শুধু নারীদের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি ইভেন্ট ছিল দুই হাজার ৯৩১টি।

ক্রীড়া পরিদফতরের তত্ত্বাবধানে জেলা ক্রীড়া অফিস সারা দেশব্যাপী ইউনিয়ন পর্যায় হতে শুরু করে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে আয়োজন করে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল টুর্নামেন্ট।  এসব আয়োজনের মধ্যে ছিল মেয়েদের ৮৫৫টি ম্যাচ, যাতে কমপক্ষে ২৫ হাজার ৬০০ মেয়ে অংশগ্রহণ করেছে। বিপিএল চলাকালে বিসিবি বিভিন্ন ভেন্যুতে শূন্য বর্জ্য ক্যাম্পেইন চালায়, যা এ বিষয়ে তরুণদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ায়।

এই উৎসবের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আয়োজন করে চা শ্রমিক ও খাসিয়া জনগোষ্ঠীদের অংশগ্রহণে সিলেটে দিনব্যাপী ফুটবল প্রতিযোগিতা, কক্সবাজারে বিচ ফুটবল, ৬৪ জেলায় অনুর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্ট, অ্যামপিউটি ফুটবল ফেস্টিভাল, তিন পার্বত্য জেলায় সুবিধাবঞ্চিত নারী ফুটবলারদের ফুটবলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে চার দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ, সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলে ফুটবল ফেস্টিভাল, ঢাকায় বিভিন্ন দূতাবাসের ইয়াং ডিপ্লোমেটদের নিয়ে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ইত্যাদি।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ, ৩টি ভেন্যুতে বিপিএল মিউজিক ফেস্ট, ৩৫০টি স্কুলের অংশগ্রহণে জাতীয় স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন, ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইত্যাদি।

বাংলাদেশ আরচারি ফেডারেশনের আয়োজনে ৬টি জেলায় এবং জাতীয় পর্যায়ে ঢাকার পল্টন ময়দানে ওপেন আরচারি প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশনের আয়োজনে ৪০০ জন পুরুষ-নারীর অংশগ্রহণে ঢাকায় তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতা এবং ঢাকা ও কক্সবাজারে তায়কোয়ান্দো ডিসপ্লে, শিশু-কিশোর তায়কোয়ান্দো প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের আয়োজনে সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায়ে নকআউট ভিত্তিতে যুব কাবাডি (অনুর্ধ্ব-১৮ বালক ও বালিকা) প্রতিযোগিতা এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল। দেশে সক্রিয় ৫৬টি ক্রীড়া ফেডারেশনও অ্যাসোসিয়েশনের সবাই এই উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন আয়োজন করে।

এছাড়াও দেশব্যাপী উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে দেশীয় ও গ্রামীণ খেলা যেমন- কাবাডি, দাড়িয়াবান্ধা, বউচি, গোল্লাছুট, ঘুড়ি উড়ানো উৎসব, রোলার স্কেটিং, সাইক্লিং, সিক্সারস ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, মিনি ম্যারাথন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, লোক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, কারুপণ্য মেলা ও পিঠা উৎসব, নজরুল সংগীত সন্ধ্যা, জুলাই-৩৬ বিষয়ক গ্রাফিতি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, শহীদদের গল্প বলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, বই পড়া, আবৃত্তি, বানান প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা, আলোচনা অনুষ্ঠান, বিজ্ঞান কুইজ, প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, ডিজিটাল লিটারেসি ক্যাম্পেইন, শীত বস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান, জিরো ওয়েস্ট ব্রিগেড গঠন, ব্রেস্ট ক্যানসার ও জরায়ু মুখ ক্যানসার বিষয়ক সচেতনতা ও কর্মশালা, যুব উদ্যোক্তা সমাবেশ, ফ্রি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এই উৎসবের অংশ হিসেবে।  

তারুণ্যের উৎসবকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রাণবন্ত করে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীদের এই উৎসবে সম্পৃক্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে এই তারুণ্যের উৎসব উদযাপিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে যুব উদ্যোক্তা মেলার আয়োজন, যুব সমাবেশ অনুষ্ঠান, উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ক বিতর্ক, কেইস কম্পিটিশন, আন্তর্জাতিক পুষ্টি অলিম্পিয়াড, আলোচনা অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও তারুণ্যের কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও একই রকম কর্মসূচি হাতে নেয়।

পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয় উৎসব চলাকালে বিভিন্ন ভেন্যুতে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা উদ্যোগ নেয়।   

সমাজের সবার অংশগ্রহণে সব সরকারি ও বেসরকারি অংশীজনদের সমন্বিত উদ্যোগে এই উৎসবটি উদযাপন করা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর, সংস্থা, ক্রীড়া সংস্থা এবং স্থানীয় পর্যায়ে বিভাগীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ অংশগ্রহণে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ নতুন দিনের বার্তা প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেম উইং আরও জানায়, তারুণ্যের উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১ ডিসেম্বর ২০২৪ মিডিয়া লঞ্চিং ও লোগো উন্মোচনের মাধ্যমে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং তারুণ্যের উৎসব উদযাপন সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তারুণ্যের উৎসবের উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে সারা দেশে একযোগে তারুণ্যের উৎসবের কাউন্টডাউন শুরু হয়, যা ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে শেষ হয়। এই উৎসবকে সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে ২৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, ২৩টি বিভিন্ন পর্যায়ের দফতর ও সংস্থা, একযোগে কাজ করে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের ৮০টি মিশনেও তারুণ্যের উৎসব ব্যাপকভাবে উদযাপিত হয়েছে।