বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ধারাবাহিকতায় জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হয়েছে। হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশের জনগণ সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার হারিয়ে প্রজায় পরিণত হয়েছিল। জনগণের কোনও ন্যায্য দাবি তারা মেনে নেয়নি।’
শুক্রবার (১৪ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে শিশু আছিয়াসহ সকল ধর্ষণের বিচার, ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ ও ছাত্রনেতাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কাফন মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই সমাবেশে সংগঠনের সম্পাদক সৈকত আরিফ এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেখেছি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ব্যর্থতা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন এমনকি উপদেষ্টাদের কেউ কেউ কথা বলেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ প্রসঙ্গে সকল রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও উপদেষ্টাদের স্পষ্ট অবস্থান জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে। তারা পদত্যাগ চান কি না; না চাইলে কেন চান না তা জনগণের জানার অধিকার আছে। আমরা আশা করবো তারা সেই অবস্থান পরিষ্কার করবেন।’
পুলিশের প্রসঙ্গে আরিফের অভিযোগ, ‘শেখ হাসিনার সময় পুলিশ শত ব্যর্থতার পরেও জনদাবিকে অগ্রাহ্য করত। বর্তমান সরকারের মাঝেও আমরা সে ধরনের চরিত্র দেখতে পাচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৭ মাস পরেও যখন ধর্ষণ-খুন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারছে না তখন এই ব্যর্থতার দায় নিয়ে জনগণ যখন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছে তখন সরকার সেই জনদাবিকে অগ্রাহ্য করছে।’
‘বিভিন্ন রাজনৈতিক পক্ষকে নিজেদের গোষ্ঠীস্বার্থে ঘটনা অন্যদিকে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র করতে দেখছি। আমরা স্পষ্ট করে বলি, জুলাই অভ্যুত্থানে মানুষ জীবন দিয়েছে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। জনগণের আকাঙ্ক্ষা যেখানে কেন্দ্রীয় বিষয়ে পরিণত হবে। জনগণের কোনও দাবি যদি সরকার মানতে না চায় তার জন্য জনগণের কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে।’
ছাত্রনেতাদের নামে ‘মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের’ দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচির মতো নিরীহ কর্মসূচিতে পুলিশ ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। হামলা চালিয়ে আবার তারা ছাত্রনেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড ও ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক কর্মসূচিতে উপস্থিত না থেকেও মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। হাসান শিকদার নামে এক সাংবাদিককেও অভিযুক্ত করা হয়েছে যিনি সেই কর্মসূচিতেই উপস্থিত ছিলেন না। আমরা অবিলম্বে ছাত্রনেতাদের নামে এ সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।’
সৈকত আরিফের সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক আরমানুল হকের সঞ্চালনায় কাফন মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ছাত্র ফেডারেশন তোলারাম কলেজের সংগঠক রাইসা ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পাদক সাকিবুর রনি, ঢাকা মহানগর শাখার সহসভাপতি তুহিন ফরাজী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জিনাত আরাসহ নেতৃবৃন্দ।
কাফন মিছিলে অন্যান্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের অর্থ সম্পাদক ফারহানা মানিক মুনা, কেন্দ্রীয় সদস্য সাইদুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠক সীমা আক্তারসহ নেতৃবৃন্দ।