নারীর প্রতিকৃতিতে জুতা পেটা: সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির প্রতিবাদ

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশকে কেন্দ্র করে ‘নারী বিদ্বেষী প্রচারণা, নারীবিরোধী এবং নারীর মর্যাদা হানিকর বক্তব্য এবং বর্বরোচিত আচরণে’র প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি।

রবিবার (৪ মে) সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির (৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম) পক্ষ থেকে এই ঘটনার তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের কাছে নারীর প্রতিকৃতিতে জুতা দিয়ে পেটানোর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর প্রতি অবমাননা হিসেবে সমালোচনা শুরু হয়।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেমের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, শুক্রবার (৩ মে) নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাবনা বাতিলের দাবিতে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে এবং সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে নারী জাতির প্রতি যে চরম অসম্মানজনক, বর্বরোচিত, ন্যাক্কারজনক আচরণ সংঘটিত হয়েছে— তা আমাদের সমগ্র নারী সমাজকে স্তম্ভিত করেছে। এই ধরনের বর্বরোচিত আচরণ ও বক্তব্য কোনও সভ্য দেশ ও সমাজের পরিচয় বহন করে না। 

বিবৃতিতে তিনি বলেন, সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির (৬৭টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্ল্যাটফরম) পক্ষ থেকে আমরা এই ঘটনার তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি— হেফাজতে ইসলামসহ এ ধরনের নারীবিরোধী, ধর্মব্যবসায়ী, মৌলবাদী দলগুলো নানা সভা সমাবেশে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত এ ধরনের নারীবিদ্বেষী, অসম্মানজনক, অমর্যাদাকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা লক্ষ্য করলাম— বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ১০টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে। শুধুমাত্র নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই নারীবিরোধী গোষ্ঠীগুলো নারী কমিশন এবং তাদের প্রস্তাবনা বাতিল করার দাবির নামে নারীর সমতার অধিকারের বিরুদ্ধে সহিংস হয়ে উঠেছে।

ডা. ফওজিয়া মোসলেম বিবৃতিতে আরও বলেন, আমরা আরও লক্ষ্য করছি— ধর্মান্ধ, মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো কর্তৃক সংঘটিত দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর প্রতি এত বড় অন্যায়, বর্বরতা ও নৃশংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা সরকারের দায়বদ্ধতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। 

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি মনে করে— যেকোনও বিষয়ে সবার মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে, কিন্তু সরকারের গঠিত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল করার মতো অযৌক্তিক দাবি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।

সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি গণতন্ত্রকামী, সম-অধিকার ভিত্তিক এবং বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের চেতনায় বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও শক্তিকে এই ধরনের অপতৎপরতা প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছে।

হেফাজতে ইসলামের অসাংবিধানিক সব দাবি-দাওয়া অগ্রাহ্য করে নারী-পুরুষের সমতা ভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র গঠনে প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে।