কৃষকের স্বার্থের কথা বাদ দিয়ে কৃষির কথা বলা যাবে না: পরিবেশ উপদেষ্টা

কৃষি বলতে শুধু কৃষিজমিকেই বোঝানো নয় বরং কৃষি উপকরণ, কৃষকের স্বার্থের কথা বাদ দিয়ে কৃষির কথা বলা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সোমবার (৫ মে) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘দৈনিক বণিক বার্তা’ পত্রিকার আয়োজনে 'কৃষি, খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা সম্মেলন ২০২৫'-এর দ্বিতীয় অধিবেশন 'খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা' অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বহুল প্রতীক্ষিত কৃষিজমি সুরক্ষা আইন নিয়ে আন্তমন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যেই সভা হয়েছে। মাস দুয়েকের মধ্যে আইন পাস করে দেওয়া হতে পারে।

এসময় তিনি বেশি মুনাফা লাভের আশায় আনসার্টিফাইড কোনও ফসল বা ফসলি বীজ দেশে প্রবেশ না করানোর আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি এবং প্রাণ-প্রকৃতি— এই তিনটি বিষয়ের সমন্বয় ব্যতিরেকে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস গ্রহণযোগ্য নয়। পরিবেশকে মূল ধারায় আনতেই হবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। ‘উন্নয়ন করলে পরিবেশের ক্ষতি হবেই’—এমন মানসিকতা বদলাতে হবে। শিল্প দূষণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে গেলে বলা হয়, হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হুমকিতে পড়বে। কিন্তু নদীর ওপর নির্ভরশীল লাখো মানুষের জীবিকা ও সুপেয় পানির নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। এছাড়াও এতে প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন মাল্টিমোড গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইস্ট কোস্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজম জে চৌধুরী, আইইউবিএটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুর রব, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সহসভাপতি খুশি কবির, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তোফাজ্জল ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

বণিক বার্তা আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বণিক বার্তার সম্পাদক ও প্রকাশক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ। অনুষ্ঠানের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষকের ন্যায্যতা বিষয়ে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।

মৎস্য ও প্রাণী উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দিতে গিয়ে কৃষকের দিকটা সেভাবে দেখা হয় না। শহুরে মানুষের খাদ্য জোগান এবং দাম নাগালে রাখতে আমদানির মাধ্যমে কৃষকের ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়। আমাদের খাদ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জন করতে হবে, যাতে ভোক্তা এবং কৃষক দুই পক্ষই উপকৃত হন।

এ সেশনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। প্যানেল আলোচক হিসেবে অংশ নেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর আলম, টি. কে. গ্রুপের গ্রুপ ডিরেক্টর মোহাম্মাদ মুস্তাফা হায়দার, এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী এবং ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান।