ব্রিটেনের অভিবাসন নীতি: একমত হতে পারছেন না ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপিরা

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সাম্প্রতিক কঠোর অভিবাসন নীতি নিয়ে ভিন্নমতে রয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশি চার এমপি। ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির মনোনয়নে নির্বাচিত এই চার এমপি—রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রূপা হক ও আপসানা বেগম—অভিবাসী পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম হলেও এ বিষয়ে তাদের অবস্থান একমুখী নয়।

রুশনারা আলী এবং রুপা হক এখনও পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারা প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান না নিতে সচেতনভাবে নীরবতা বজায় রেখেছেন।

অন্যদিকে, হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেটের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি স্টারমারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত, সরাসরি বিরোধিতা না করলেও কৌশলীভাবে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি তার নির্বাচনি এলাকার ‘শরণার্থীদের স্বাগত জানানোর গর্বিত ইতিহাস’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন, যা দলীয় ঐক্য বজায় রাখার পাশাপাশি নতুন অভিবাসীদের পক্ষেও সহানুভূতিশীল মনোভাব প্রকাশ করে।

সবচেয়ে স্পষ্ট এবং কণ্ঠস্বর উঁচু করেছেন পপলার ও লাইমহাউসের এমপি আপসানা বেগম। তিনি সরকারের কঠোর নীতির তীব্র সমালোচনা করে তার নির্বাচনী এলাকার বহুসাংস্কৃতিক শক্তিকে তুলে ধরেছেন। পার্লামেন্টে ‘বর্ডার সিকিউরিটি, অ্যাসাইলাম অ্যান্ড ইমিগ্রেশন বিল’-এর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই বৈরী পরিবেশের অবসান ঘটাতে হবে, উৎসাহিত করতে নয়।’ তিনি বর্তমান আশ্রয় ব্যবস্থার মানবিক সংকটের কথা তুলে ধরেন এবং এমপি নাদিয়া হুইটম প্রস্তাবিত সংশোধনীর সমর্থনে আশ্রয়-সম্পর্কিত মৃত্যুর তথ্য প্রকাশের দাবিও জানান।

এই চার এমপির ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে, লেবার পার্টি অভিবাসন ইস্যুতে একদিকে আগামী নির্বাচনের বাস্তবতা এবং অন্যদিকে দলটির অন্তর্নিহিত অন্তর্ভুক্তিমূলক মূল্যবোধের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে।

অভিবাসন পরিসংখ্যান ও প্রভাব

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিষয়ে নির্দিষ্ট ও হালনাগাদ সরকারি পরিসংখ্যান নেই। তবে কিছু প্রকাশিত তথ্য নিম্নরূপ:

শিক্ষার্থী ভিসা: ২০২৪ সালে বাংলাদেশি প্রধান আবেদনকারীদের জন্য প্রায় ৬ হাজার ৪০০টি স্পনসর্ড স্টাডি ভিসা মঞ্জুর করা হয়েছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশের বেশি হ্রাস। নির্ভরশীল ভিসার তথ্য স্পষ্ট না হলেও পূর্বে নির্ভরশীলদের অনুপাত ছিল বেশি। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নির্ভরশীলদের জন্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

কেয়ার ভিসা: মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত এক বছরে বাংলাদেশি নাগরিকদের ৭ হাজার ৯৭টি হেলথ অ্যান্ড কেয়ার ওয়ার্কার ভিসা দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে এই ভিসার আওতায় বিপুলসংখ্যক নির্ভরশীল যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করলেও, ২০২৪ সালের মার্চ থেকে নতুন নির্ভরশীলদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে ভবিষ্যতে এই সংখ্যা অনেক কমে যাবে।

অন্যান্য ওয়ার্ক পারমিট: ২০২৪ সালে, স্বাস্থ্য ও কেয়ার বাদে সকল ‘ওয়ার্কার’ ভিসায় মোট ২ লাখ ৫৪ হাজার ২২৯টি প্রধান আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ হাজার ১০৭ জন। তাদের নির্ভরশীলদের সংখ্যা সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য নেই।

সামগ্রিক প্রভাব

যদিও যুক্তরাজ্যে বর্তমান বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, কর্মী ও তাদের পরিবারের মোট সংখ্যা নির্ধারণ করা কঠিন, তবে বিদ্যমান পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি এসব ভিসার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কঠোর অভিবাসন নীতির ফলে, বিশেষ করে নির্ভরশীলদের ওপর বিধিনিষেধ ও নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি, আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থী ও কর্মী অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে।

পরিণতিতে, যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী বিদ্যমান বাংলাদেশি অভিবাসী সম্প্রদায় হয়তো স্থিতিশীল থাকবে, তবে নতুন আগতদের সংখ্যা ও তাদের পরিবারের যুক্ত হওয়ার সুযোগ সীমিত হয়ে আসবে।