যুক্তরাজ্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের দেশে অবস্থান এবং দীর্ঘদিন ধরে নতুন কমিটি না হওয়ায় সংগঠনটি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সভাপতি এম এ মালেক এবং সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ—উভয়েই বাংলাদেশে অবস্থান করছেন এবং নিজ নিজ আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সক্রিয় রয়েছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, দলের শীর্ষ নেতারা বিদেশে গেলে কাউকে লিখিতভাবে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও, এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি বলে জানিয়েছেন সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী পাপ্পু। তার ভাষায়, ‘সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বারবার দেশে নির্বাচনি কাজে ব্যস্ত থাকায় দলীয় কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা যদি লিখিতভাবে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে যেতেন, তাহলে দলকে আরও গতিশীল রাখা যেতো।’
এম এ মালেক বর্তমানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং সিলেট-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, কয়সর এম আহমদ বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে সুনামগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে কাজ করছেন। প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিকও এখন দেশে অবস্থান করছেন।
২০১৮ সালে গঠিত ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালে। অথচ এখনও নতুন কমিটি গঠনের কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে জোনাল কমিটির সদস্যদের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হলেও শীর্ষ পদে কারা আসছেন—সে বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুজ্জামান সুহেল বলেন, ‘যুক্তরাজ্য বিএনপি বিদেশের একটি শক্তিশালী ইউনিট। হাসিনা-বিরোধী আন্দোলনে এ সংগঠনের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। অনেকে পরিবার রেখে দিন-রাত কাজ করেছেন। আমি আশা করি, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্বাচনের সময় দায়িত্বশীলরা ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করবেন।’
তবে ভিন্নমতও রয়েছে। যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন তৃণমূল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একই নেতৃত্বে সাত বছর ধরে দল চলছে। আমরা শুধু আন্দোলনের ছবি-ভিডিও দেখে যাচ্ছি। অনেকেই কেবল দেশে গিয়ে নির্বাচনি পদ পাওয়ার আশায় যুক্তরাজ্য বিএনপিকে ব্যবহার করছেন।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি নাসির আহমেদ শাহীন বলেন, ‘তারেক রহমান ১৬ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে আছেন। তিনি এখানকার সবাইকে চেনেন এবং কে দলের জন্য কী করেছেন, তা ভালোই জানেন। পদ পাওয়ার আশায় কেউ কেউ অগ্রিম প্রচারণা চালাচ্ছেন, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি প্রকৃত ত্যাগী নেতারাই মূল্যায়িত হবেন।’
বিশ্লেষকদের মতে, একটি সংগঠন শক্তিশালী থাকতে হলে নিয়মিত কাঠামোগত রদবদল, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও বিকল্প নেতৃত্ব গড়ার চর্চা থাকতে হয়। যুক্তরাজ্য বিএনপির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে একই কমিটি কার্যকর থাকায় তা সাংগঠনিক স্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলছে।
কবে নাগাদ নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে—সে বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কিছু না জানানো হলেও ধারণা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষার্ধেই নেতৃত্বে বড় পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।