বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান ৪ বিদেশি সংগঠনের

বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতি ‘চরমভাবে অবনতি হয়েছে’ দাবি করে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে চারটি বিদেশি সংগঠন। ‘রাজনৈতিক সহিংসতা’, ‘সংবাদমাধ্যমের দমন’, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা’ এবং ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ অভিযোগ এনে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

‘ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম’, ‘সাউথ এশিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফোরাম (বেলজিয়াম)’, ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ ইন জার্মানি’ এবং তুরস্কভিত্তিক ‘আর্থ সিভিলাইজেশন নেটওয়ার্ক’— এই চারটি সংগঠন যৌথভাবে একটি ১৬-পৃষ্ঠার বিশদ চিঠি পাঠিয়েছে ইইউ পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক কমিশনার কাজা ক্যালাসসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিনিধির কাছে।

চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন, জেল হেফাজতে নির্যাতন ও হত্যা, এবং ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর হাতে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসলামপন্থিরা সাবেক সরকারের সমর্থক সন্দেহে নিরীহ সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ও গ্রামবাসীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং হত্যা করছে।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যা ও মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়ে নিহতের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।

এছাড়া, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে বলেও চিঠিতে দাবি করা হয়েছে। ১৬৭ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল এবং প্রায় ১৪০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার অভিযোগ করা হয়েছে। প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো এবং দ্য ডেইলি স্টার-এর সাংবাদিকরা নিয়মিত হুমকি ও হয়রানির মুখে পড়ছেন। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছে এবং তাকে যথাযথ চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

এই সংকট মোকাবেলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, ‘গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষার দাবিদার ইইউ’র এখনই হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। বাংলাদেশে দমন-পীড়ন বন্ধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত এবং সংবাদমাধ্যম ও নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষায় স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে।’

এই বিবৃতি প্রদান করেন— ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন (যোগাযোগ পরিচালক, ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরাম, যুক্তরাজ্য), পাওলো কাসাকা (নির্বাহী পরিচালক, সাউথ এশিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফোরাম, বেলজিয়াম), ক্লাউস স্টেপেল (ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ ইন জার্মানি) এবং তারিক গুনেরসেল (কবি ও প্রতিষ্ঠাতা, আর্থ সিভিলাইজেশন নেটওয়ার্ক, তুরস্ক)।

তারা বলেন, বাংলাদেশ এখন এক সংকটজনক মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ছাড়া দেশে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব নয়।