‘পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিপর্যয়ের শিকার নারীরা’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিবেশ উপপরিষদের সদস্য ড. নবনীতা ইসলাম বলেছেন, পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিপর্যয়ের শিকার নারীরা।

রবিবার (২৯ জুন) বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আয়োজনে ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিপর্যয়: নারীর সংকট ও সংগ্রাম’ বিষয়ক আলোচনা সভায় ৩৫টি জেলার পরিবেশ সংকট বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে উপস্থাপিত প্রেজেন্টেশনে তিনি এ কথা বলেন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন  সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৩৫টি জেলা শাখা থেকে প্রাপ্ত পরিবেশ বিষয়ক সংকট নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন ড. নবনীতা ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজের পরিচালক, গবেষক, পরিবেশবিদ এবং অ্যাক্টিভিস্ট পাভেল পার্থ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক এবং ঢাকা স্ট্রিমের এডিটর ইন চিফ গোলাম ইফতেখার মাহমুদ, বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব।

নবনীতা ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ু বিপর্যয়ে  সংকটের চিত্র একেক জেলায় একেক রকম। বিবিএস এর প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় যেমন বরিশাল ও খুলনায় সঙ্গী বা স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকারের হার বেশি, সিলেটে কম। পটুয়াখালীতে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রে নারীদের জন্য পৃথক টয়লেটের ব্যবস্থা নেই; এতে যৌন সহিংসতা বেশি ঘটে। ফলে তালাকের ঘটনা বেড়ে যায়, খুলনা বিভাগে লবণাক্ত পানির কারণে তালাক ও বহুবিবাহের সংখ্যা বেশি। এই পরিস্থিতিতে বৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি ও মনিটরিং করতে হবে; কৃষি কাজে জৈব সার ব্যবহার, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা বন্ধ করতে হবে; নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে; লবণাক্ত প্রবল এলাকার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

প্রধান বক্তা হিসেবে পাভেল পার্থ বলেন, আমরা যখন পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে কথা বলি, তখন খনার কথা ওঠে আসে। এখানে প্রথম প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকৃতির বিরুদ্ধে পুরুষ আধিপত্যবাদের চ্যালেঞ্জ করে খনা। পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন নারীরা, তারা বাস্তুতন্ত্রকে প্রকৃতভাবে বুঝতে ও ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। নদী, পাহাড়, খাল-বিল, হাওড়ের সংখ্যা কমছে। কোন ধরনের জেন্ডার জাস্টিস ছাড়া জলবায়ু সাম্যতা সম্ভব নয়। নারী এবং পরিবেশ অভিন্ন, তাদের আলাদা করলে কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। নারীদের পরিবেশ রক্ষার ভাবনা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বাহিত হয়। সমাজে বিদ্যমান শ্রেণি বর্গের সংকট আছে, কাঠামোগত বৈষম্য আছে, পরিবেশগত সংকট আছে, সেখানে জলবায়ু বিপর্যয় নারীর জন্য আরও কাজের বোঝা বৃদ্ধি করছে; প্রান্তিক নারীর প্রতি বৈষম্য আরও বৃদ্ধি করছে। এই বৈষম্য রোধে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে; সব ধরনের রাজনীতিকে একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা স্ট্রিমের এডিটর ইন চিফ গোলাম ইফতেখার মাহমুদ বলেন, নদীগুলো আজ প্রভাবশালীদের দখলে। নদীর তীরবর্তী মানুষেরা তাদের অধিকার হারিয়েছে, নারীরা এই জনপদ থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। রাষ্ট্রের উন্নয়ন দর্শন পরিবেশ ও জলবায়ুর ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রভাব নিয়ে আসে। গুটিকয়েক প্রভাবশালী তথাকথিত উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করেছে। তথাকথিত উন্নয়ন পরিবেশের জন্য মোটেও ইতিবাচক ফল বয়ে নিয়ে আসেনা।

আলোচনা শেষে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ডিসএবল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক মর্জিনা আহমেদ, গণসাক্ষরতা অভিযানের জয়া সরকার এবং অপরাজিতার দেশি পণ্যের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আফরোজা চৈতী।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, মানবসভ্যতার অগ্রগতির হয়েছে প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। মানব সভ্যতা যখন নারীর হাতে ছিল, তখন পরিবেশ ও প্রকৃতি নিরাপদ এবং সংরক্ষিত ছিল। আজ নারীর বিপন্নতা ও জলবায়ুর বিপন্নতাকে একইসূত্রে দেখতে হবে। নারী আন্দোলন মনে করে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনেও বৃত্ত ভেঙে এগিয়ে যেতে হবে। পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পরিবেশবিদসহ সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।