কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার নেপথ্যে ছিল দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্ব। পূর্ব শত্রুতার জেরে বড় ভাই ফজর আলীর ওপর প্রতিশোধ নিতে ছোট ভাই শাহ পরান (২৮) পরিকল্পিতভাবে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।
শুক্রবার (৪ জুলাই) রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) কুমিল্লার বুড়িচং থানার কাবিলা বাজার এলাকা থেকে শাহ পরানকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের ভাষ্য মতে, পরিকল্পনার মূল হোতা শাহ পরান তার বড় ভাই ফজর আলীর সঙ্গে পারিবারিক বিরোধের জেরে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে একটি মব গঠন করে। এরপর ফজর আলী ও ভুক্তভোগী নারীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটায়। সেই মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন জানান, ফজর আলী ও শাহ পরান বেশ কিছুদিন ধরে ওই নারীকে উত্যক্ত করে আসছিল। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে বিরোধের জেরে এক পর্যায়ে গ্রাম্য সালিশে জনসম্মুখে শাহ পরানকে চড়-থাপ্পড় মারে ফজর আলী। এই অপমানের প্রতিশোধ নিতে শাহ পরান সুযোগ খুঁজতে থাকে।
তিনি বলেন, ঘটনার পরিপেক্ষিতে গত ২৬ জুন রাতে ফজর আলী ৫০ হাজার টাকা সুদের লেনদেনের অজুহাতে ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে। এরপর পূর্বপরিকল্পিতভাবে শাহ পরান ও তার সঙ্গে থাকা আবুল কালাম, অনিক, আরিফ, সুমন ও রমজান ওই ঘরে হানা দেয়। তারা দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে ফজর আলীকে মারধর করে এবং নারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ করে। পরে ধারন করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, শাহ পরান ভিডিও ধারণ এবং মব সৃষ্টির জন্য ইমো অ্যাপে মেসেজ দিয়ে অন্যদের ডেকে আনে বলেও জানিয়েছে র্যাব। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে ছিল অভিযুক্তরা। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শাহ পরানকে গ্রেফতার করা হয়।
লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, শাহ পরান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায় স্বীকার করেছে। তাকে মুরাদনগর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। বাকি অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গত ২৬ জুন রাতে মুরাদনগরের বাহেরচর গ্রামে ওই নারীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয় এবং সেই ভিডিও ২৯ জুন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। একই দিন ভুক্তভোগী বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ফজর আলীসহ এখন পর্যন্ত ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।