মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে: জাফরুল্লাহ

কারাগারে মারা যাওয়া লেখক মুশতাক আহমেদের গায়েবানা জানাজায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, লেখক মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের খোঁজ কি পাওয়া যায়নি? পাওয়া গেছে। তার হত্যাকারী হলো সরকার ও  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অধ্যাদেশ।  

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুআরি) বিকাল ৪টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে গায়েবানা জানাজার আগে এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে মুশতাকের গায়েবানা জানাজার অংশ নেওয়ার জন্য বিকাল ৩টা থেকে সেখানে সমবেত হন বিভিন্ন স্তরের মানুষ। জানাজার আগে সমাবেশে করেন তারা। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হোসেন।

সমাবেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘লেখক মুশতাককে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের খোঁজ কি পাওয়া যায়নি? পাওয়া গেছে। তার হত্যাকারী হলো সরকার ও  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অধ্যাদেশ। সিকিউরিটি আইনের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা প্রত্যেকে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত।’ তিনি বলেন, ‘আজকে বিচারপতিদের দায়িত্ব পরিষ্কারভাবে বলা যে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নাগরিকের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী।’

বিচারপতিদের উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও  বলেন, ‘আপনাদেরও দায়িত্ব আছে, আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে আপনারা উন্মোচন করবেন—মুশতাক হত্যার জন্য দায়ী কারা।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘লেখক মুশতাক তরুণদের স্বপ্ন দেখাতেন। এই স্বপ্ন দেখানো মানুষটার স্বপ্নকে শুধু হত্যা করা হয়নি,এই মানুষটাকে আজকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে দায়ী করছি। অবশ্যই এটা একটা জঘন্যতম আইন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধু আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নেয়নি, মানুষের প্রাণও কেড়ে নিয়েছে৷ এ আইনের মাধ্যমে এ রাষ্ট্র একটি নিরীহ প্রাণ কেড়ে নিলো। সরকারের অধীনস্থ যে বিচারালয়, সেখানেও লেখক মুশতাকের জামিন হয়নি। জামিন পাওয়া একজন আসামির ন্যায়সঙ্গত অধিকার। কিন্তু এ রাষ্ট্র খুনি এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটকারীদের রাতারাতি ব্যাংককে পাঠিয়ে দেয়৷ যারা ন্যায় এবং দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলে—এ রাষ্ট্র তাদের ধারণ করে না৷ এ অবস্থায় যাদের কথা বলার প্রয়োজন ছিল, তারা এখন কথা বলছে না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তাদের চুপ থাকতে বাধ্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিচারালয় সবই এখন দালালে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক এবং লেখকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।’

সমাবেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার লেখক মুশতাককে ছয় ছয়বার জামিন না দিয়ে, তাকে এ সরকার হত্যা করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে এ সরকার নাগরিকদের কথা বলার স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। মুশতাকের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়—এ সরকার জনগণের সরকার না। এ রাষ্ট্র খুনি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণকে নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।'

ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক বলেন, ‘আজ আমরা যদি সংগঠিত হতে না পারি, একত্রিত হতে না পারি, তাহলে আমাদের অবস্থাও লেখক মুশতাকের মতো হবে। এটা অস্বীকার করার কোনও অবকাশ নেই। বিএনপি-জামায়াতের দোহাই দিয়ে সরকার সবাইকে নির্যাতন করছে। এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাংবাদিক এবং লেখকরা। আমি আমাদের ছাত্র ভাইদের ব্যানারে দেখেছি লেখা আছে, মুশতাকের হত্যাকারী রাষ্ট্র। আমি বলবো না—রাষ্ট্র আমাদের। মুশতাকের হত্যাকারী এই খুনি সরকার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে কারাগারে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে জামিনে মুক্ত ও রাষ্ট্রচিন্তা সংগঠনের সদস্য দিদারুল ইসলাম, ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন প্রমুখ।