‘এত বছর বয়সে এমন কষ্ট কখনো করিনি বাবা’ 

‘আমার এত বছর বয়সে গতকাল আর আজ যে কষ্ট করলাম তা কখনো করিনি। একদিকে ঘাটের জ্যাম অন্যদিকে বড় বড় লাগেজ নিয়ে আমিনবাজার থেকে গাবতলী পর্যন্ত হেঁটে আসা। এই বয়সে অনেক কষ্ট হয়েছে বাবা। আমিনবাজার থেকে আসতে কিছুটা সময় রিকশায়, কিছুটা পথ হেঁটে আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছে লাগেজগুলো টানা হ্যাঁচড়া করতে। এরপরও একজনকে দিয়ে লাগেজগুলো আনিয়েছি, সে নিয়েছে প্রায় ১০০ টাকার বেশি। সঙ্গে আমার পরিবারের আরও সাত সদস্য রয়েছে, তাদেরও একই অবস্থা।’ 

গাবতলীতে দাঁড়িয়ে রামপুরহাট যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত ষাটোর্ধ নূর মোহাম্মদ মোল্লা বলছিলেন এসব আক্ষেপের কথা। কীভাবে বাসায় পৌঁছাবেন, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।

শুক্রবার (২৩ জুলাই) দুপুরের দিকে গাবতলীতে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় নূর মোহাম্মদ মোল্লা। কিছুটা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, ‘ঘাটে রাত দুইটা থেকে সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এ ছিল খুবই যন্ত্রণাদায়ক। বয়স হয়ে গেছে কোথাও বেশিক্ষণ থাকা সম্ভব হয় না। সকাল ৭টার মধ্যে ঢাকায় থাকার কথা থাকলেও পৌঁছেছি দুপুর একটার পর। তারপরও বাস নামিয়ে দিয়েছে আমিন বাজার ব্রিজ’র আগেই। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে আর কিছুটা রিকশা দিয়ে এই গাবতলী পর্যন্ত এসেছি। এখন রামপুরা বাসায় যাব কিন্তু কোনও যানবাহনে পাচ্ছি না। কীভাবে যাবো কী করবো? আমার সঙ্গে আরও সাতজন রয়েছে, সবাই এখন ধাঁধার মধ্যে আছে।’

লকডাউনের মধ্যে কেন বের হতে হয়েছেন বা ঢাকায় আসতে হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে নূর মোহাম্মদ মোল্লা বলেন, ‘আগের লকডাউনে যা শুনেছিলাম চলাফেরা করা যায় সেজন্যই আমরা এসেছিলাম। পরিবহন থেকে বলা হয়েছিল যারা বারোটার আগে ফেরিতে ওঠতে পারবেন তারা ঢাকা পৌঁছাতে পারবেন কোনও সমস্যা ছাড়াই। আর সব ঠিকঠাক থাকলে ভোরেই আমরা পৌঁছে যেতাম।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদ শেষে নোয়াপাড়া থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) রাতে সোহাগ পরিবহনের একটি বাসে করে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যরা। আর গ্রামে গেলে কিছু জিনিসপত্র যেমন, চালের গুড়া এইগুলো আনতে হয়। এগুলো নিয়ে এসেছি।’ 

নূর মোহাম্মদের পরিবারের মত অনেকেই অনেক কষ্ট সহ্য করে পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে এই লকডাউনের মধ্যে রাজধানীতে এসেছেন। 

আছিয়া বেগম এবং তার বোন আসমা বেগম এসেছেন নড়াইল থেকে। আমিনবাজার থেকে হেঁটে গাবতলী পর্যন্ত আসতে দেখা যায় তাদের। তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগটি কষ্ট করে দুজনই ধরাধরি করে নিয়ে আসছিলেন। এমন ভোগান্তিতে পড়বেন ভাবেননি। গাবতলী এসে বাসায় যাওয়ার জন্য কোনও কিছু না পেয়ে আরও যেন হতাশ হয়ে পড়েন তারা। বলেন, সরকারের এ বিষয়টি একটু ভাবার দরকার ছিল। আর সবকিছু বন্ধ করলে বাস চলাচল কাল রাত থেকেই বন্ধ রাখা উচিত ছিল।

রংপুর থেকে সায়েম মিয়া এসেছেন রাজধানীতে। ঈদের আগের দিন গিয়েছিলেন পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। লকডাউনের প্রথম দিন ভোর বেলা পৌঁছার কথা থাকলেও দুপুর নাগাদ গাবতলীতে পৌঁছান তিনি। বলেন, আমিন বাজার থেকে বাসের যাত্রী নামিয়ে দেওয়া হয়েছে সেজন্য হেঁটে যাচ্ছি। করোনার সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে বাড়ি যেতে হলো কেন- এমন প্রশ্নের উত্তর, ‘বছরে দুটি ঈদ। এই দিনে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে যত কষ্টই হোক না কেন যেতে হয়।’