তবুও বাইরে মানুষ

সরকার ঘোষিত ‘কঠোরতম লকডাউনের’ প্রথমদিনে একদিকে যেমন ঢাকায় প্রবেশের জন্য মানুষের ঢল, আবার অন্যদিকে ঢাকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাও আছে। দুই কাজেই মানুষ বাইরে বের হচ্ছে। তার ওপর আবার মানুষের মাঝে ঈদের আমেজ। তাই নিজ নিজ এলাকায় চলছে ঈদের শুভেচ্ছা, আড্ডা ও কুশল বিনিময়। আবার কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনেও যাচ্ছেন বাজারে কিংবা পরিচিত কাউকে হাসপাতালে দেখতে। সব মিলিয়ে বাইরে মানুষ আছেই। অথচ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘরে থাকার নির্দেশনা ছিল। শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন সব চিত্র দেখা যায়।সদরঘাট হয়ে ঢাকায় ফেরা মানুষ

রাজধানীর মেরাদিয়া, বনশ্রী, রামপুরা, খিলগাঁও, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলা মোটর, কাঁঠালবাগান, পান্থপথ, মিরপুর রোড ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা খুবই কম। তবে পায়ে হাঁটা মানুষের সংখ্যা বেশি। এদের অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছেন। পরিবহন না থাকায় পায়ে হেঁটেই বাসায় ফিরছেন ঈদ পালন করে। আবার ঈদের আমেজও দেখা গেছে অনেক এলাকায়। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং কুশল বিনিময় করতেও রাস্তায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে।

সদরঘাট হয়ে ঢাকায় ফেরা মানুষবনশ্রী এলাকায় দেখা যায়, বাসার নিচেই বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডারত ছিলেন কিছু তরুণ। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, লকডাউনের কারণে এলাকার বাইরে যেতে পারছি না। তাই বাসার নিচেই একটু আড্ডা দিচ্ছি।

বাসার নিচে আড্ডা দেওয়ার প্রবণতা প্রায় প্রত্যেক এলাকায় আছে। রাজধানীর গ্রিন রোড এলাকায় দেখা গেছে, তরুণ বয়সের ছেলেরা পথের মোড়ে মোড়ে আড্ডা দিচ্ছেন বন্ধুদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাভাবিক পরিস্থিতে ঈদের সময় বন্ধুবান্ধব মিলে তারা ঘুরতে যেতেন। লকডাউনের কারণে কোথাও যেতে পারছেন না। তাই এলাকায় আড্ডা দিচ্ছেন।

সদরঘাট হয়ে ঢাকায় ফেরা মানুষআড্ডা দেওয়া ছাড়াও অন্যান্য নানা ধরনের অজুহাতে মানুষ বাসা থেকে বের হন। মিরপুর রোডে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে দোকানে যাচ্ছিলেন মনসুর আলী। তার এলাকায় দোকান সব বন্ধ। তাই তিনি কোক খুঁজতে বের হয়েছেন। শুধু কোক কিনতে বেরিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি মাথা নেড়ে সায় দেন। এছাড়া পান, সিগারেট, বাচ্চার জন্য চকোলেট, এমনকি চা খাওয়ার অজুহাতেও বের হচ্ছে মানুষ।

কঠোর লকডাউন উপেক্ষা করে যারা রাস্তায় বের হয়েছেন, যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে তাদের করা হচ্ছে জরিমানা। রাস্তায় প্রতিটি সড়কে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি। চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনের গন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। এছাড়া অভিযান পরিচালনা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও।

সদরঘাট হয়ে ঢাকায় ফেরা মানুষচেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানুষ অদ্ভুত অদ্ভুত বাহানায় বাসা থেকে বের হয়। চেকপোস্টে জানতে চাইলে তারা বলছেন—আত্মীয়র বাসায় যাচ্ছি। এ রকম পরিস্থিতির মধ্যে কেন যাচ্ছেন জানতে চাইলে বলছেন—সেখানে কারো করোনা নেই। এছাড়া মাছ, মুরগি, ডিম কিনতে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাওয়ার বাহানাও পাওয়া যায় চেকপোস্টে।

জানতে চাইলে সায়েন্সল্যাব এলাকায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বলেন, মানুষের বাহানার শেষ নেই। যৌক্তিক কারণ যেমন আছে, অযৌক্তিক কারণও আছে। অযৌক্তিক কারণে বের হয়েছেন যারা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম