ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে অর্থ লুট, গ্রেফতার ৬

ব্যাংকে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনকারীদের টার্গেট করে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে অর্থ লুট করে আসছিল একটি চক্র। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর মতিঝিল ১১/২ টয়েনবি সার্কুলার রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও মাদক নিয়ন্ত্রণ টিম।

সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর-রশিদ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো– ফরিদ উদ্দিন (৫০), মো. পারভেজ (৩৫), সাইফুল ই নাদিম (৩০), শফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল (৫০), মো. জসিম (৩৪) ও মো. নাছির (৩৮)।

গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ডিবি পুলিশ লেখা তিনটি জ্যাকেট, একটি হাতকড়া, একটি লাঠি (স্টেইনলেস স্টিলের), দুইটি হোলস্টার, তিনটি পিস্তল সদৃশ খেলনা পিস্তল, একটি ওয়াকিটকি (খেলনা), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বিভিন্ন নামের অ্যাকাউন্টের পাঁচটি চেক বই, একটি নোয়াহ মাইক্রোবাস, ও একটি ‘পুলিশ’ লেখা স্টিকার জব্দ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের নতুন পোশাক পরে উপস্থিত হন গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা।

গোয়েন্দা পুলিশ প্রধান হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘সম্প্রতি ব্যাংকে যারা বড় বড় লেনদেন করছেন তাদের টার্গেট করে ডিবি পরিচয়ে অপহরণ করে নগদ টাকা লুট করছে ভুয়া ডিবি পরিচয়ের ডাকাত দল।’

সংবাস সম্মেলনে ডিবিপ্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা সাধারণ গ্রাহকের ছদ্মবেশে ব্যাংকে প্রবেশ করে ব্যাংকে আগত টাকা লেনদেনকারীদের কৌশলে অনুসরণ করতে থাকে। বেশি টাকা লেনদেনকারী ও সহজ-সরল গ্রাহকদের টার্গেট করে তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে। চক্রের কয়েক জন সদস্য বাইরে অবস্থান করে। বাইরে রাস্তায় থাকা সদস্যদের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাংক থেকে বের হওয়া পর্যন্ত টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে অনুসরণ করা হয়। এক পর্যায়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তি বাইরে আসা মাত্র ডিবি পুলিশ পরিচয়ে মাইক্রোবাসে তুলে সুবিধাজনক স্থানে নেওয়া হয়।

গাড়িতে উঠিয়ে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তার সঙ্গে থাকা টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী লুটে নেয়। রাস্তায় কোনও সুবিধাজনক স্থানে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়েছে।

ভুয়া ডিবির পোশাক সম্পর্কে হারুন বলেন, ‘ডিবি পুলিশের আগের পোশাক খুব সহজেই নকল করা যেতো। যে কোনও জায়গায় তৈরি করাও যেতো। ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ভুয়া ডিবির সদস্যরা ডাকাতিতে খেলনা পিস্তল ও হাতকড়া ব্যবহার করছে। এতে আসল ডিবি পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।’

ডিবি পুলিশের নতুন পোশাক নকল করা সম্ভব না উল্লেখ করে মহানগর গোয়েন্দা প্রধান হারুন বলেন, ‘শুধু ব্যাংকে নয়, অনেক সময় বাসায় ডিবি পরিচয়ে মানুষজনদের তুলে এনে মুক্তিপণ আদায় করতো। এ রকম অনেককে আমরা গ্রেফতার করেছি। সম্প্রতি পুলিশ বাহিনীকে ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ডিবি পুলিশের পোশাকে কিউআর (QR) কোড সংযোজন করা হয়েছে। এতে মুঠোফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে ডিবি পুলিশের পোশাকে সংযোজিত কিউআর কোডটি স্ক্যান করলে পূর্ণাঙ্গ সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।’

হারুন বলেন, ‘ডিবির কুইক রেসপন্স (কিউআর) কোডে তিনটি বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে। গোপন নাম্বার, গোয়েন্দা পুলিশের মনোগ্রাম ও রঙ্গিন লোগো থাকবে। এছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশের নতুন পোশাকে আরও কিছু গোপনীয় ফিচার থাকবে। যা আমরা প্রকাশ করছি না।’

ডিবি জানায়, আগে ডিএমপির ডিবি পুলিশ যে জ্যাকেট পরিধান করে অভিযান চালাচ্ছিল তা বেশ পুরোনো। দীর্ঘ দিন ধরে এই জ্যাকেট ব্যবহারের ফলে অনেক প্রতারক চক্র বাইরে থেকে এটি তৈরি করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করে। অনেক সময় মানুষকে ফাঁদে ফেলারও অভিযোগ পাওয়া যায়। বিভিন্ন সময় জ্যাকেটটির হুবহু কপি ভুয়া ডিবি সদস্যদের কাছে পাওয়া গেছে।

ভবিষ্যতে কেউ যেন এভাবে প্রতারণার শিকার না হয় সে জন্য ডিবিতে সংযোজন করা হয়েছে নতুন জ্যাকেট। এ জ্যাকেট নকল করা সম্ভব হবে না।

জ্যাকেটের বৈশিষ্ট্য

১. ডিএমপি ডিবির নতুন জ্যাকেটে প্রথম গোপনীয় নম্বর, গোয়েন্দা বিভাগ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সমন্বয়ে কুইক রেসপন্স কোড বা কিউআর কোডের ব্যবস্থা থাকছে। সন্দেহ হলেই যে কেউ ডিবি পোশাকে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করে ওই ব্যক্তি ডিবির প্রকৃত সদস্য কিনা তা শনাক্ত করতে পারবেন।

২. নতুন জ্যাকেটে ডিবি এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রঙিন লোগো ব্যবহার করা হয়েছে, যা সহজেই দৃশ্যমান।

৩. জ্যাকেটে রাত্রিকালীন আলোতে দূর থেকে ডিবি পুলিশের উপস্থিতি বোঝা যাবে।

৪. নতুন ডিবি জ্যাকেটে বিভিন্ন পকেটের সুবিধা রয়েছে, অভিযানকালে ডিবি সদস্যরা প্রয়োজনীয় নোটবুক, কলম ও কাগজপত্র নিরাপদে রাখতে পারবে।