দড়ি দিয়ে বেঁধে দরজা লাগাতে হয় মাউশির টয়লেটে

দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ওয়াশব্লক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থসম্মত রাখতে বছরের পর বছর নির্দেশ দিয়ে আসছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর। ওয়াশব্লক পরিচ্ছন্ন না থাকায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অপমানিতও হতে হয়েছে অধিদফতরের কর্মকর্তাদের কাছে। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়াশরুম নজরদারি করার দায়িত্ব নিয়ে অধিদফতর মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সচেতন করারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন প্রায় সময়। কিন্তু খোদ রাজধানীর আব্দুল গণি সড়কের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের টয়লেটেই বেহাল দশা। দেখে যে কারও মনে হতে পারে, মাউশির ওয়াশব্লকের খবর কী তা হয়তো জানারও সময় পান না ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মাউশির টয়লেটে দরজায় ফুটো

গত ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যেসব ওয়াশরুম কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই ব্যবহার করেন, সেগুলো অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা।  ওয়াশরুমে কোনও ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। নিচতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত কোনও ওয়াশরুমে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ নেই। ওয়াশব্লকের বাথরুম/টয়লেটগুলোর দরজা ভাঙা। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলার ওয়াশরুমে দুটি দরজা ভেঙে বড় ফুটো হয়ে আছে। বাইরে থেকে ভেতরে ওয়াশরুম ব্যবহারকারীকে দেখা যাবে।  বাথরুমে ছিটকিনি কাজ করে না। ফলে দড়ি দিয়ে ভেতর থেকে বেঁধে দিয়ে প্রাকৃতিক কাজ সারা ছাড়া কোনও উপায় নেই।

টয়লেটে দাঁড়ালেই দেখা যায় বাইরের দৃশ্য, বাইরে থেকেও দেখা যায় ভেতরে

ভবনের তিনতলার উত্তর দিকে মাওশি’র এক উপরিচালককে হ্যান্ডওয়াশ হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ দেখা গেছে। ওই কর্মকর্তা বের হয়ে যাওয়ার পর দরজা খোলা থাকার কারণে পাশের টয়লেটে থাকা একজন দরজা খুলে বের হতে পারছিলেন  না। কারণ দরজা খুলতে হলে পাশের টয়লটের দরজা বন্ধ করতে হয়। শুধু তাই নয়, এই দুটি টয়লেটের দরজার ফুটো বন্ধ করা হয়েছে কাগজ দিয়েছে। যদিও একটির কাগজ প্রায় খসে পড়ায় ভেতরের অংশ দেখা যাচ্ছিলো। এছাড়া দুটো টয়লেটের উত্তরে দুটি দরজার কোনও জানালা নেই। টয়লেটে বসে দেখা যায় মেট্রোরেলের সুন্দর অবকাঠামো এবং অধিদফতরের লোকজনের হাঁটাচলার দৃশ্য!

টয়লেটে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের নিচতলার দক্ষিণের ওয়াশব্লক শুধু অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন, নোংরাই নয়, দিনের বেলায়ও ঘুটঘুটে অন্ধকার। লাইটগুলো কতকাল আগে লাগানো ছিল, আর কতদিন ধরে লাগানো হয় না, তার কোনও তথ্য জানাতে পারেননি ওয়াশব্লক ব্যবহারকারী অধিদফতরের কর্মচারীরা।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শিক্ষক-কর্মচারীরা অধিদফতরের ওয়াশরুম ব্যবহার করে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান।

মাউশির নোংরা ওয়াশব্লকে কোথায় নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা

রাজধানীর মাধ্যমিক পর্যায়ের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওয়াশরুম নোংরা।  তিন তলা পর্যন্ত সব ওয়াশরুমই নোংরা থাকে। সেখানে হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান থাকে না। আমরা নিজেরা ব্যাগে করে সাবান নিয়ে যাই হাত ধোয়ার জন্য।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর এক কলেজ শিক্ষক বলেন, বাধ্য না হলে অধিদফতরের ওয়াশরুম ব্যবহার করি না। ব্যবহার করে পকেটে থাকা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করি। তারপর ক্যান্টিনে গিয়ে হাত ধুয়ে ফেলি।

সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে জানা যায়, মহাপরিচালক ও পরিচালকদের অ্যাটাচড ওয়াশরুম রয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ উপরিচালকের রুমেও ওয়াশরুম অ্যাটাচড। তবে বেসরকারি মাধ্যমিক-২ এর উপরিচালকের রুমে কোনও ওয়াশরুম  নেই।  যেসব ঊর্ধ্বতম কর্মকর্তার রুমে অ্যাটাচড ওয়াশরুম রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যসম্মত। অন্যদিকে কর্মচারীদের জন্য যেসব ওয়াশব্লক রয়েছে তা ব্যবহারের অনুপযুক্ত বলে মনে করেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ওয়াশব্লকের করুণ অবস্থা জানতে চাইলে তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি তারা তাদের নাম-পরিচয়ও প্রকাশ করতে সম্মত হননি।

ছবি: প্রতিবেদক।