বছরের ‘প্রথম’ তরমুজে আগ্রহ ক্রেতাদের

বাজারে উঠেছে নতুন তরমুজ। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হচ্ছে গরম মৌসুমের জনপ্রিয় এই ফল। তবে দাম নাগালের বাহিরে মনে করছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে পরিবহন করে আনতেই অধিক খরচ হচ্ছে বলে জানান ফলের আড়তদাররা।

শনিবার (৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে । এছাড়া আকারভেদে পিস অনুযায়ীও বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫৫০ টাকা করে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌসুমের প্রথম তরমুজের চালান আসছে সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বরিশালের কুয়াকাটাসহ অন্যান্য জেলা থেকে। পাহাড়ে চাষ হওয়া তরমুজের ওজন সাধারণত ৪-৫ কেজি হয়ে থাকে। আর বরিশালের তরমুজ ৬-১০ কেজি। এসব চালান রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কাওরান বাজার, বাদামতলী ও মিরপুর দিয়াবাড়ি ফলের আড়তে বেশি আসে। সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে যায়।

মৌসুমের শুরুর এ তরমুজ ক্রেতাদের আকর্ষণ করলেও দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার দর কষাকষিতে ব্যস্ত। এ বিষয়ে মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টির বিক্রেতা সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘তরমুজ মাত্র বাজারে উঠতে শুরু করেছে। অনেক ক্রেতা আছে যারা মৌসুমের শুরুর ফল খেতে চায়। তারা দামদর করে কিনে নিয়ে যায়। অনেকে শুধু দাম শুনেই চলে যান।’

আড়তদাররা ওজনে তরমুজ বিক্রির কারণে দাম বেশি বলে মন্তব্য করেন মিরপুর ১১ এর ফল বিক্রেতা সোলাইমান। তিনি বলেন, 'আমরা মণে কিনি। তাতে হিসাব করলে একশতকে আমাদের খরচ হয় ৩০ থেকে ৩২ হাজার টাকা। তারপর আনার খরচ, জায়গার ভাড়া। সব মিলায়া আর কয় টাকা বেশি বেচতে পারি।’

তবে দাম কমে যাবে মন্তব্য করে সোলাইমান বলেন, 'রমজানে শুধু তরমুজই থাকবো। এইবার আম নাই। তরমুজের চাহিদা বাড়বে। তখন দাম পড়ে যাবে। এখন শুরু দিক, এক দুই অঞ্চল থেকে তরমুজ আসে, তাই দামটা বেশি।’

তবে মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যেকোনও ফলের দাম এখন নাগালের বাহিরে বলে মনে করছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের মতে তরমুজের দাম খুবই চড়া। উপলক্ষ ছাড়া ফল খাওয়া হয় না বলেও জানান তারা।

মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টি থেকে ৬৫ টাকা দরে প্রায় ৬ কেজি ওজনের তরমুজ কিনেছেন আবদুল সাত্তার। দাম বেশি হলেও আত্মীয়ের বাড়িতে নিয়ে যাবেন বলে মৌসুমি ফলটাকেই বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দামের কারণে এখন আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ফল কিনে খাওয়া হয় কম। এক আত্মীয় আরেক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেলে হাতে করে যেটা নিয়ে যাওয়া হয় ওটাই বাসার বাচ্চারা খায়, এটাই সত্য। তরমুজ কিনলাম, কারণ অন্য কয়েক পদের ফল কেনার চাইতে তরমুজ নেয়াটাই ভালো মনে হয়েছে। মৌসুমের প্রথম ফলে সবারই আগ্রহ থাকে।’

উচ্চ দামের পাশাপাশি কেজিতে তরমুজ বিক্রিতেও আপত্তি অনেক ক্রেতার। এ বিষয়ে হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘তরমুজ কেজিতে বিক্রি করাটা একটা অবিচার। এর খোসাই তো কম অর্ধেক ওজন। আর এসব ফল কিনতে হয় সাইজ দেখে। সাইজ অনুযায়ী দাম। সেই দামও এখন বেশি। গরমে তরমুজ খাওয়ার আনন্দ আপাতত আর পাওয়া হবে না।'

তরমুজের বাজার ও এর উচ্চমূল্যের কারণ সম্পর্কে দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী একতা ফলের মার্কেটের আড়তদার ও বাংলা ফল আড়ত সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হাওলাদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'রোদ উঠলে তরমুজের দাম বাড়ে। মেঘলা দিনের চাইতে একশতকে ৫ থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত বেশি দাম উঠে। আজকে সবচেয়ে বড় সাইজের তরমুজ একশ’ করে বেচছি ২৮ হাজার টাকায়। যেইটা গত ৫ দিন আগেও ২০ হাজার টাকার মতো ছিল।’

পরিবহন খরচ ও রাস্তায় নানা চাঁদাবাজির কারণে তরমুজের দাম বেড়েছে বলে মন্তব্য করে এই ফল ব্যবসায়ী নেতা, ‘তরমুজ আনতে এখন খরচ বাড়ছে। আগে ফেরিতে করে আনলে ২৭ মণ আনা যাইতো, এখন ব্রিজে ২২ মণ করে আনতে হয়। ট্রাকের ওজন বাদ দিলে তরমুজ আসে ১৩ মণ। দুই গাড়ির মাল তিন গাড়িতে করে আনি।’

মৌসুমে তরমুজ পরিবহন করা গাড়ির মালিকরাও সুযোগ নেয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এখন সব ক্ষেতেই তরমুজ কাটা হচ্ছে। এত তরমুজ আনার জন্য যথেষ্ট গাড়ি ওই অঞ্চলে যায় না। চাহিদা বাড়ার সুযোগে গাড়ির লোকেরা মাল টানার দাম বাড়ায়া দিছে। গত সপ্তাহের তুলনায় ১২ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে এখন।’ এছাড়া তরমুজ আনতে পথে নানাজনকে চাঁদা দিতে গিয়ে আরও ৩ হাজার টাকা বেশি খরচ হয় বলেও জানান জামাল হাওলাদার।