সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণ: ঝুঁকি এড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটি নিয়ে কাজ করবে রাজউক

রাজধানী উন্নয়ন করপোরেশনের (রাজউক) টেকনিক্যাল টিমের আহ্ববায়ক ও রাজউকের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, রাজধানীর গুলিস্তানের নর্থ সাউথ রোডের ক্যাফে কুইনে বিস্ফোরণের কারণে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সাপোর্ট পিলার বা পাইপ দিয়ে ভবনের ওজন ছড়িয়ে দিতে পারলে সবাই নিরাপদে কাজ করতে পারবেন। পানির লাইন ভেঙে গেছে। প্রচুর পানি জমছে। সবকিছু মিলিয়ে ভবনটি স্থিতিশীল করতে পারলে সব ধরনের কাজ করা যাবে। এটা নিয়ে আজ কাজ শুরু করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।

শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম কাজ হলো ভবনটিকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনা। এরপর ভবনটি ভাঙা বা সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের এটা নিশ্চিত করতে হবে, ভবনটি যেন হুড়মুড়িয়ে ভেঙে না পড়ে। ভবনের ভেতরে ঝুঁকি থাকায় ফায়ার সার্ভিস কাজ করতে পারছে না।’

ভবনের ৯টি পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই ভবনে ২৪টি পিলার রয়েছে। এরমধ্যে সামনের দিকের ৯টি পিলার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনও কোনও পিলারের গোড়ার ঢালাই সরে গিয়েছে। রড বেঁকে গেছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি স্থিতিশীল করতে যে যন্ত্রপাতি দরকার রাজউকের সেগুলো আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটার জন্য বেশি যন্ত্রপাতির দরকার নেই। আমাদের টেকনিক্যাল টিম এসেছে। আমরা আজই কাজ শুরু করবো। নির্মাণসামগ্রী এলেই কাজ শুরু হবে। ভবনটি ভাঙতে হলেও আগে পিলারগুলো ঠিক করে স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে হবে। কারণ ভবন ওপর থেকে ভাঙতে হয়। বেজমেন্টের ৯টি পিলার ছাড়া অন্য পিলার আপাত দৃষ্টিতে ঠিক মনে হয়েছে।’

ভবনের নির্মাণ সংক্রান্ত নথি পাওয়া গেছে কিনা জানতে চাইলে ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ভবনটি কত সালে নির্মাণ হয়েছে এ বিষয় সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। একবার জানা গেছে ৮৫ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে। পরে আবার জানা গেছে ৮০ সালে। সব মিলিয়ে আমরা নথিপত্র খোঁজার কাজ করছি। কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘রাজউকের এই টেকনিক্যাল কমিটির কাজ হলো ভবনটির সর্বশেষ অবস্থা জানা। ভবন ব্যবহার করা যাবে কিনা সেটা নিয়েই কাজ করছি। আমাদের কমিটিতে বুয়েটের দুজন শিক্ষক আছেন। ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহা পরিচালক আছেন। এছাড়া রাজউকের কর্মকর্তারা আছেন। আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসেসমেন্ট করে সিদ্ধান্ত দিতে পারবো। এরপর যে সিদ্ধান্ত আসে আমরা সেটা সুপারিশ করবো। সব মিলিয়ে যেটা ভালো হবে আমরা সেই সিদ্ধান্ত জানাবো।’

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কারণে এর সামনের রাস্তা খুলে দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভবনটি যদি স্থিতিশীল অবস্থায় আনা যায়, প্রাথমিক যে সাপোর্ট আমরা দেবো তাতে যদি নিরাপদ মনে হয় তাহলে রাস্তা ছাড়ার সিদ্ধান্ত আসবে। কারণ এটা অনেক ব্যস্ত সড়ক। গাড়ি চলাচল করলে একটা ভাইব্রেশন সৃষ্টি হবে। রাজউক চায় না মানুষ ভোগান্তিতে থাকুক। আজ কিংবা আগামীকাল বসে আমরা এই সিদ্ধান্ত জানাবো।’

মঙ্গলবার (৭ মার্চ) বিকাল পৌনে ৫টার দিকে রাজধানীর সিদ্দিকবাজার এলাকায় ওই সাত তলা ভবনে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত দেড় শতাধিক। নিহতদের মধ্যে ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বাকি দুই জন।