গার্মেন্টসের ৮০ ভাগ নারীকর্মী মৌখিক ও শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির শিকার

দেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার ৮০ শতাংশ নারীকর্মী মৌখিক ও শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। ৮৩ ভাগ নারীকর্মী  যৌন হয়রানির ধরনগুলো সম্পর্কে সচেতন না। বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির মাঠ পর্যায়ের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালে সংগঠনটি এই গবেষণা পরিচালনা করে।  

মঙ্গলবার (২১ মার্চ)  জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কোয়ালিশনের উদ্যোগে ‘আইএলও  কনভেনশন- ১৯০’ বাংলাদেশ সরকারের অনুসমর্থনের লক্ষ্যে আয়োজিত এক মানববন্ধনে এসব তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি। এসময় তারা নিজেদের ৮ দফা সুপারিশও উল্লেখ করে।

আটটি ট্রেড ইউনিয়ন এবং চারটি এনজিও’র ‘আইএলও কনভেনশন ১৯০’ অনুস্বাক্ষরে গঠিত হয় একটি কোয়ালিশন।

বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির  গবেষণার তথ্যমতে, ৮০ শতাংশ নারী পোশাককর্মী  মৌখিক ও শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির শিকার এবং ৮৩ শতাংশ কর্মী যৌন হয়রানির ধরনগুলো সম্পর্কে সচেতন না। শুধুমাত্র শারীরিকভাবে যৌন হয়রানির শিকার হলেও বেশিরভাগ কারখানায় প্রতিরোধ কমিটি না থাকায়, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে পারেন না। যা তাদের কর্মপরিবেশে কাজ করার জন্য অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে এবং অনেক কর্মী চাকরি ছেড়ে চলে যান।  ৮১ শতাংশ নারী কর্মী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন এবং কার্যাবলি সম্পর্কে সচেতন না। আরও পরিসরে ৭৬ শতাংশ নারী পোশাককর্মী কর্মক্ষেত্রে কোনও না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে ১০০ ভাগ নারী কর্মী মৌখিকভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন।

মানববন্ধনে বক্তারা জানান, লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার, কারখানা, প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

লিঙ্গভিত্তিকি সহিংসতা ও যৌন হয়রানির সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পালন না করার কারণে এবং সচেতনতার অভাবে এই অপরাধ দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। যার ফলে ভুক্তভোগীরা সঠিক সুরক্ষা পাচ্ছেন না।

বক্তারা জানান, বিশ্বব্যাপী কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি নিরসনে  ২০১৯ সালের ২১ জুন আইএলও’র ১০৮তম অধিবেশনে ‘কনভেনশন-১৯০’ নামে গৃহীত হয়। বাংলাদেশ সরকার এই কনভেশন অনুমোদন করে সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধি গ্রহণ করে সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

মানববন্ধনে পোশাকর্মীদের পক্ষ থেকে এবং গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ৮টি  সুপারিশ জানানো হয় এবং তা বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি দাবি রাখেন বক্তারা।

৮ দফা সুপারিশ

কর্মক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, কার্যকরী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করতে হবে, ‘আইএলও কনভেনশন ১৯৯০’ অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুস্বাক্ষর করতে হবে,  অবিলম্বে কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা ও হয়রানি বন্ধে পূর্ণাঙ্গ আইন ও বিধি গ্রহণ করতে হবে, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি প্রতিরোধে রাত্রিকালীন নারীকর্মীদের  কাজ করানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে, সব কর্মক্ষেত্রে এবং গণপরিবহনে নারীকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শ্রম আইনের সংস্কার এবং ব্যর্থতায় কঠোর শাস্তি বিধান নিশ্চিত করতে হবে, আসা-যাওয়ার পথে নিরাপত্তা এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারী নির্যাতন এবং হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগের  দ্রুত বিচার  নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আখতার, বাংলাদেশ পোশাক শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তাহমিনা রহমান, বাংলাদেশ মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রাশেদুল আলম রাজু, বাংলাদেশ বিপ্লবী গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সালাউদ্দিন স্বপনসহ  বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটি এবং বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়নের নেতকর্মীরা।