বায়তুল মোকাররমের ইফতারে সব শ্রেণির রোজাদারের মিলনমেলা

রমজান মাসের প্রথম দিন আজ। একই সঙ্গে জুমার দিন, শুক্রবার। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ইফতারের সময় দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজারও মানুষের উপস্থিতি। কেউ পথচারী, কেউ হকার, কেউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, কেউ বা আবার ভিক্ষুক। সকলেই রয়েছেন একই সারিতে। সবার ইফতারও একই। কোনও শ্রেণি বৈষম্য না করে এক কাতারেই ইফতার করতে বসেছেন সবাই। এ যেন মুসলমানদের মেলবন্ধনেরই এক উদাহরণ। যেখানে নেই কোনও হিংসা, বিদ্বেষ কিংবা বৈষম্য। 

হাজারও ধর্মপ্রাণ মুসল্লির উপস্থিতিতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আয়োজন করা হয়েছে এই ইফতারের। গতবারের মতো এবারও এই আয়োজন করেছে মুসল্লি কমিটি। এর আগে এই ইফতারের আয়োজন করা হতো ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে (ইফা)।

ইফতারের ৩০ মিনিট আগে থেকে জাতীয় মসজিদে প্রবেশ করতে থাকেন মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা। সময় যত গড়াতে থাকে মানুষের সংখ্যা ততই বাড়তে থাকে। শ্রেণিপেশার ভেদাভেদ ভুলে সবাই যেন এক কাতারে বসে যায় ইফতারের আগে।

মুসল্লি কমিটির সেক্রেটারি মিজানুর রহমান মানিক জানান, গত বছর প্রতিদিন ১ হাজার মানুষকে ইফতার করানো হতো। এবার আমরা প্রতিদিন ২ হাজার জনকে মানে এই রোজার মাসে ৬০ হাজার মানুষকে ইফতার করানোর উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সায়েম সোবহান আনভীরের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে এই ইফতারের সকল ব্যয় বহন করা হচ্ছে।

তিনি জানান, আমরা এখানে সকল শ্রেণির মানুষকে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করি। আমাদের সবার ইফতার একই। এর মধ্যে কোনও ভিন্নতা নেই, সবাই সমান। অনেকের ইফতার করার সামর্থ নেই। অনেকে মার্কেটে ঘুরতে আসে, কেনাকাটা করতে আসে, ইফতারের সময় হয়ে গেলে হয়তো ইফতার করতে পারবে না। অনেকের যাত্রা পথে ইফতারের সময় হয়ে যায়। কেউ যেন ইফতার করা থেকে বাদ না পড়ে তাই আমাদের এই উদ্যোগ।

প্রিন্টিং প্রেসে চাকরি করা গোলাম মোস্তফা বলেন, এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে জানতে পেরে এখানে ইফতার করতে এসেছি। এবারই প্রথম। আমাকে আমার পরিবার দেখাশোনা করতে হয়। বাবা নেই। আমার জন্য ভালোই হলো, কিছু টাকা সেভ হয়েছে।

দুবাই প্রবাসী মো. রাজুর ভাষ্য, ঈদের ছুটিতে দেশে এসেছি। বায়তুল মোকাররম আসছিলাম বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। ইফতারের সময় হয়ে গেছে। বাসায় গিয়ে ধরতে পারবো না। তাই আর বাসায় যাইনি, এখানে ইফতার করে নিলাম। ভালোই হয়েছে, অনেক মানুষের সঙ্গে ইফতার করা হলো।

আব্দুল মজিদ, পেশায় ভিক্ষুক। তিনি এ বছরই ঢাকায় এসেছেন। তিনি জানান, মানুষের মুখে শুনে এখানে ইফতার করতে এসেছেন। এই আয়োজন তার বেশ পছন্দ হয়েছে।

ফুটপাতের ব্যবসায়ী মো. শফিক বলেন, প্রতি বছরই মোটামুটি এখানে ইফতার করা হয়। ইফতারের সময় তো বেচাকেনা নাই, তাই এখানে এসে ইফতার করে যাই।

ইফতারের বাক্সের মধ্যে ছিল খেজুর, কলা, ছোলা, মুড়ি, বেগুনি, পেয়াজু, জিলাপি ও পানি।