ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে বিএনপির পাশে ঐক্যফ্রন্ট নেই কেন?

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে প্রার্থী দিয়েছে। বিএনপির প্রার্থীদের ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দিলেও এতে দলটির আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কোনও সমর্থন দেয়নি। জোটটির নেতারা বলছেন, সিটি ভোট নিয়ে বিএনপি শরিকদের সঙ্গে কোনও আলোচনাই করেনি। এ কারণে জোটগতভাবে সমর্থন বা প্রচারণায় যোগ দেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সিপিবি, ইসলামী আন্দোলন ঢাকা সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ‘বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি’ অভিযোগ এনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সাতটি দল নির্বাচন থেকে বিরত রয়েছে। দলগুলো কোনও প্রচারণায় অংশ নেবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা জানান, প্রার্থী দেওয়ার আগে-পরে কোনও সময়েই কথা বলেনি বিএনপি। তারা মনে করছেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে বিএনপি জেনে-শুনেই পরাজয়ের পথে হাঁটছে।

বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, এটা ঠিক হলেও অংশ নেওয়ার পদ্ধতি ভুল বলে মনে করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বুধবার (১ জানুয়ারি) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘তারা প্রার্থী দেওয়ার পর সম্মিলিত বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রার্থী দেওয়া যেতো, সে চেষ্টাও করেনি বিএনপি। এটাই তাদের ভুল।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘‘এখনও তাদের বসা উচিত। যেহেতু বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে, এখনও সময় আছে তারা কথা বলতে পারে। বিএনপি তো ‘একলা চলো’ নীতিতে আছে, এটা তাদের ত্যাগ করা উচিত। তারা প্রকাশ্যে বলে জাতীয় ঐক্য ছাড়া কিছু হবে না, অন্যদিকে একলা চলে। সবাই মিলে একটা ফাইট দেওয়া উচিত ছিল, তারা যেভাবে চলছে, তাতে বিএনপি তো জেনে-শুনে হেরে যাচ্ছে। সবাইকে নিয়ে মাঠে নামলে তো ভালো ফাইট হতো।’

ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি মহসিন রশিদ জানান, ‘দলের দুই নেতা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের  (ডিএনসিসি) ৩৫ নং ওয়ার্ডে এবং  দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের  (ডিএসসিসি)৬১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রার্থিতা করছেন।

মহসিন রশিদ বলেন, ‘মেয়রপ্রার্থীদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা হবে কিনা, এটা দলীয়ভাবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আমরা দলের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো।’

কাউন্সিলর দুজনের ক্ষেত্রে কোনও সমঝোতা হতে পারে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে মহসিন রশিদ বলেন, ‘কাউন্সিলররা দলীয়ভাবে নির্বাচন করছেন না। তবে, যেহেতু আমাদের নির্বাচনি সংস্কৃতিতে প্রার্থীদের দলীয়ভাবে চিহ্নিত করা হয়, সেদিক থেকে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।’

ফ্রন্টের শরিক জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রবের রাজনৈতিক সচিব গীতিকবি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী  বলেন, ‘ঢাকা সিটি নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট যৌথভাবে বিএনপির প্রার্থীকেই সমর্থন দেবে কিনা, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও আলোচনা হয়নি। এটা আলোচনা হলে বলা যাবে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা জানান, বিএনপি সমর্থন চাইলে  ঐক্যফ্রন্ট আন্তরিকভাবেই নেবে। তবে, বিএনপি প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে আলোচনা না করায় জোটগতভাবে সমর্থনের সুযোগ কমে গেছে বলে দাবি করেন শরিক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপির পক্ষাবলম্বনকারীদের অন্যতম আ স ম আবদুর রব। চিকিৎসার কাজে তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন। আগামী ১২ জানুয়ারি তিনি দেশে ফিরবেন।

গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি মহসিন রশিদ জানান, নিজের চেকআপ ও চিকিৎসার কাজে বিদেশে রয়েছেন তার দলের সেক্রেটারি ড. রেজা কিবরিয়া। তিনি দেশে ফিরবেন আগামী ১৩ জানুয়ারি।

ফ্রন্টের একটি সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতারা একসঙ্গে হলে ঢাকা সিটি ভোট নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

যদিও বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, সিটি ভোটে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা না করার যুক্তি হচ্ছে, ফ্রন্টের সঙ্গে আলোচনা করলে বিভিন্ন যুক্তি উঠে আসতো। সেক্ষেত্রে নিজেদের সিদ্ধান্ত জোটগত সিদ্ধান্তে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হতো। ফলে, সেই দৃশ্যপট তৈরি না করাই যুক্তিযুক্ত মনে করেছে বিএনপি।  সূত্রের ভাষ্য, ২০ দলীয় জোটকে নিয়ে ইতিবাচক অবস্থানে আছে বিএনপি। দলের হাইকমান্ড যেভাবে চায়, ২০ দলীয় জোটের শরিক নেতারাও সেভাবে সায় দেন। তবে জোটটির অন্যতম শরিক জামায়াত কয়েকটি কাউন্সিলর পদে সমঝোতা চাইতে পারে, এমন সম্ভাবনা আছে বলে জানায় সূত্র।

এ বিষয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি।’ নির্বাচনে সমর্থন দেওয়া থেকেও বিরত থাকবেন বলে জানান ফ্রন্টের এই নেতা।

জানতে চাইলে বুধবার (১ জানুয়ারি) রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে যদি ঐক্যফ্রন্ট যুক্ত হয়, তাহলে তারা জানাবে।’

প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ জানুয়ারি ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।