‘তালপাকা গরমে’ পুড়ছে জনজীবন

বর্ষাকাল শেষ হলো হালকা বৃষ্টি দিয়ে। তাতে গরম আরও বেড়েছে। উত্তাপ ছড়িয়েছে প্রকৃতিতে। ফলে শরৎকাল শুরু হয়েছে ‘তালপাকা গরমের’ উত্তাপ দিয়ে। এতে খাঁ খাঁ করছে প্রকৃতি, পুড়ছে জনজীবন।

ষড়ঋতুর তৃতীয় ঋতু হিসেবে পরিচিত ভাদ্র-আশ্বিন মাস। এই ঋতুতে সকালে কাশফুল পদ্ম, শালুক প্রভৃতি ফুল ফোটে। দুপুরে তালপাকা গোমট গরম পড়ে। বিকালে আকাশে সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়। তবে আবহমান বাংলার সেই ঋতুবৈচিত্র্য এখন অনেকটাই বদলে গেছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

বুধবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও কিছু কিছু এলাকায় তাপপ্রবাহ বইতে পারে। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকাল থেকে এখনও বৃষ্টির দেখা মেলেনি কোথাও, বরং তাপদাহে জনজীবন হাঁসফাঁস করছে।

এদিন জন্মাষ্টমীর ছুটি থাকায় সরকারি অফিস-আদালত, ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ। সেজন্য রাজধানীতে মানুষের চলাচল কম থাকলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত কাজে বের হওয়া মানুষজনকে হাঁসফাঁস করতে দেখা গেছে।

সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন-আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। মালিবাগের একটি দোকানে কাজ করা আল আমিন বলছিলেন, প্রতিদিন রামপুরা থেকে ভেতর দিয়ে হেঁটে দোকানে আসি। কিন্তু গতকাল ও আজ এত রোদ, এত গরম যে পা চলছে না। বাধ্য হয়ে ৫০ টাকা দিয়ে রিকশায় করে এসেছি। এখন দোকানে ফ্যান থাকলেও টেকা যাচ্ছে না গরমে।

রামপুরা-বনশ্রী এলাকায় রিকশা চালান কুড়িগ্রাম থেকে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে আসা আব্দুল হাকিম। তিনি বলেন, ‘গত দুদিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। রোদের যে তাপ, তাতে রাস্তায় বেশি সময় টেকা যায় না। একবেলা গাড়ি চালিয়ে বাসায় গিয়ে বিশ্রাম নেবো। সন্ধ্যার পর আবার গাড়ি নিয়ে নামবো।’

আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সৈয়দপুরে ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ৬ ডিগ্রিতে অবস্থান করছে শ্রীমঙ্গলে। টানা বৃষ্টি বা ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় আবহাওয়া উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গোপালগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলা এবং ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রাও প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বর্ধিত পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

‘তালপাকা গরম’ বাংলায় এই প্রবাদের মূলে রয়েছে— গরম না হলে তাল পাকবে না, এটাই স্বাভাবিক অবস্থা। এটি ভাদ্র মাসের গরম বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অদ্ভুত এমন আবহাওয়া বিরাজ করছে এখন।

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন