শীতের তীব্রতায় কাঁপছে দেশ, ঢাকায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। ঢাকায় শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। গত দুই দিনের তুলনায় শনিবার (৭ জানুয়ারি) অনেক কমে গেছে তাপমাত্রা। আজ রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ৪। একই সঙ্গে ঢাকার জন্যও আজ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আগামী আরও বেশ কয়েক দিন শীতের এই তীব্রতা থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

ভোগান্তি
সকালে থেকে রাজধানীর আকাশে ছিল না সূর্য। কাল দিনের বেলায় সূর্য ওঠায় কিছুটা তাপমাত্রা বাড়লেও দুপুরের পর আলো কমে আসায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করে। এরপর রাতের তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি কনকনে বাতাসে কাঁপন ধরে যায়। এই অবস্থায় সূর্য দেখা না যাওয়ায় আজকের তাপমাত্রা আরও কমে গেছে। এতে সকাল থেকেই শীতের তীব্রতা যেমন বেশি, তেমনি কনকনে বাতাস যেন গায়ে হুল ফোটাচ্ছে।

প্রচণ্ড শীতের তীব্রতায় থমকে গেছে রাজধানীও। কামরাঙ্গীরচরে শীত নিবারণের চেষ্টা। ছবি: ফোকাস বাংলা

শীতে বেশি কষ্টে আছেন বৃদ্ধরা। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুদের এই শীতে রোগ দেখা দিয়েছে। যাদের এজমা আছে, কোল্ড এলার্জি আছে, তাদের মধ্যে আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে। এদিকে শীতজনিত রোগের কারণে হাসপাতালেও রোগী বাড়ছে। বিশেষ করে ডায়রিয়াজনিত অসুস্থতার কথা বেশি বলে জানা গেছে।

রিকশাচালক কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘গত কদিন এক বেলার বেশি রিকশা চালাতে পারছি না। হাত-পা যেন জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে বাসায়ও শীতের কাপড় নাই। এর আগে এত শীত হয় নাই।’ অনেকে কম্বল দিচ্ছে জানা গেলেও তা বেশি দিচ্ছেন না বলেও জানান তিনি।

পল্টনের ফুটপাতে থাকা রাশেদা জানান, তিনি গরম কাপড় কিছু পেয়েছেন। কেউ একজন দিয়েছেন। কিন্তু তাতেও তার শীত মানছে না। পলিথিন, ছালার বস্তা গায়ে দিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। অন্যদিন সন্ধ্যায় কেউ আগুন জ্বাললে সেখানে যেতেন।

চিকিৎসকদের পরামর্শ
হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‌‘তীব্র শীতের সময় শিশু ও বৃদ্ধের জন্য বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে। এ সময় শ্বাসতন্ত্রীয় রোগগুলো বেড়ে যায়। নিউমোনিয়ার মতো প্রাণঘাতী অসুখ হওয়ার শঙ্কা দেখা যায়। ফলে এই বয়সীদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখা জরুরি।

শৈত্যপ্রবাহে দেখা দিচ্ছে ঠান্ডাজনিত রোগ। হাসপাতালে বাড়ছে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা। কামরাঙ্গীরচরে। ছবি: ফোকাস বাংলা

তিনি আরও বলেন, ‘গরম জামাকাপড়ের পাশাপাশি গোসলের সময় গরম পানি ব্যবহার ও শিশুরা যাতে আবার বাড়তি কাপড়ে ঘেমে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় কান-মাথা ঢেকে রাখতে হবে।’

আবহাওয়া অধিদফতর কী বলছে
আজ দেশের নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ ছাড়া ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেছে দেশের সব অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমেছে অনেক। সবচেয়ে কম সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কুমিল্লায় ১৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আছে ১৫ অঞ্চলের তাপমাত্রা। এর মধ্যে তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৬, বদলগাছিতে ৯ দশমিক ৮, যশোর ও দিনাজপুরে ১০, সাতক্ষীরায় ১০ দশমিক ২, ঈশ্বরদীতে ১০ দশমিক ৪, সৈয়দপুরে ১০ দশমিক ৫, রাজশাহী, কুমারখালী ও ডিমলায় ১০ দশমিক ৬, বরিশাল ও বগুড়ায় ১০ দশমিক ৭, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরে ১০ দশমিক ৮, নিকলিতে ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রচণ্ড শীত আর কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত হচ্ছে বগুড়ার জনজীবন। ছবি: ফোকাস বাংলা

এদিকে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।

কুয়াশার বিষয়ে বলা হয়, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

তাপমাত্রার বিষয়ে বলা হয়, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে।

ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতের তীব্রতায় থমকে গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনজীবন। ছবি: ফোকাস বাংলা

আবহাওয়াবিদরা কী বলছেন
আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘আগামী বেশ কয়েক দিন এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকতে পারে। যদি সূর্যের তাপ পাওয়া না যায়, তাহলে শৈত্যপ্রবাহের এলাকাও বিস্তার লাভ করতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় আজ যে তাপমাত্রা, তাতে শৈত্যপ্রবাহ বলা না গেলেও দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসায় কোল্ড ওয়েভের মতোই অনুভূতি পাচ্ছে নগরবাসী। আজ রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।’