আজ আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস

নগরে বাড়ছে দূষণ, ছাড়িয়ে গেছে সব মানমাত্রা

ঢাকা শহরে আশঙ্কাজনকভাবে শব্দ দূষণ বাড়ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশভুক্ত এলাকার তুলনায় উত্তর সিটি করপোরেশনে শব্দদূষণের পরিমাণ বেশি। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শব্দদূষণ রোধে ঢাকা শহরকে হর্নমুক্ত নগরী হিসেবে ঘোষণা করার পরামর্শ দেন অনেকে। এমন এক পরিস্থিতিতে পালিত হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সেন্টার ফর হেয়ারিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন ১৯৯৬ সাল থেকে উচ্চ শব্দ নিয়ে বৈশ্বিক প্রচারণার শুরু করে। ১৯৯৬ সাল থেকে এপ্রিল মাসের শেষ বুধবার দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সে অনুযায়ী এবার ২৬ এপ্রিল হচ্ছে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস। শব্দ দূষণ, শব্দ দূষণের ক্ষতিকারক দিকসমূহ, শব্দ দূষণরোধে করণীয় সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরা এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। দিবসটির প্রতিপাদ্য- প্রোটেক্ট ইয়োর ইয়ার, প্রোটেক্ট ইয়োর হেলথ।

দিবসটি উপলক্ষে পরিবেশ অধিদফতর দেশের ৬৪ জেলায় শব্দ দূষণ বিরোধী অভিযান পরিচালনা করবে বলে জানা যায়। পাশাপাশি জেলাভিত্তিক কর্মশালা ও র‌্যালি, দূষণের সচেতনতা বাড়াতে পোস্টার, লিফলেট, স্টিকার বিলি করা হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মাসুমা খানম। তিনি বলেন, শব্দ দূষণ রোধে হাইড্রোলিক হর্নের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে একযোগে সারাদেশে এই অভিযান পরিচালনা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দূষণের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতেও কাজ করছি আমরা।

দেশের বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থাও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে।

অন্যদিকে ঢাকা শহরের শব্দ দূষণের মাত্রা নিয়ে সম্প্রতি গবেষণা করেছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস)। তাদের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার সব এলাকাতেই শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ তে উল্লেখিত আদর্শমান অতিক্রম করেছে শব্দের মাত্রা। নগরের বিভিন্ন স্থানে সাধারণভাবে শব্দের গ্রহণযোগ্য মানমাত্রার থেকে প্রায় ১ দশমিক ৩ থেকে ২ গুণ বেশি শব্দ পাওয়া গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া গেছে ৭৬ দশমিক ৮০ ডেসিবল। যে তিনটি সড়কের সংযোগ স্থলে সর্বোচ্চ মাত্রার শব্দ দূষণ দেখা গেছে সেগুলো হলো নিউমার্কেট মোড়, নয়া পল্টন মোড় এবং প্রেসক্লাব মোড়। সেখানে শব্দ দূষণের মাত্রা যথাক্রমে ১০০ দশমিক ৬৫ ডেসিবল, ৯২ দশমিক ২২ ডেসিবল এবং ১০ দশমিক শূন্য ৩ ডেসিবল।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় শব্দের মাত্রা পাওয়া গিয়েছে ৮০ দশমিক ৫৬ ডেসিবল। যে তিনটি সড়কের সংযোগ স্থলে সর্বোচ্চ মাত্রার শব্দ দূষণ পাওয়া গেছে সেগুলো হলো- মোহাম্মদ বাসস্ট্যান্ড মোড়, শিয়া মসজিদ মোড় এবং মাসকট প্লাজা মোড় সেখানে শব্দ দূষণের মাত্রা যথাক্রমে ৯৯ দশমিক ৭৭ ডেসিবল, ৯৩ দশমিক শূন্য ৫ ডেসিবল এবং ৯০ দশমিক ২৭ ডেসিবল।

এমন এক পরিস্থিতিতে গবেষণা দলের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার ঢাকা শহরকে হর্নমুক্ত ঘোষণার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত হাইড্রোলিক হর্ন এর ব্যবহার কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেইসঙ্গে যাত্রী, চালক ও গাড়ি মালিকদের সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, চিহ্নিত এলাকাগুলোতে (নিরব, আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও মিশ্র) সাইনপোস্ট উপস্থাপন করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনে (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, শুধু সরকারিভাবেই নয়, আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। সরকার বা কোনও একটি সংস্থার পক্ষে এককভাবে শব্দ দূষণের সমস্যার সমাধান করা কঠিন ব্যাপার। তাই সবাই মিলে শব্দ দূষণ প্রতিরোধ করতে হবে ও নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে।