আসছে শীত, শঙ্কা বাড়াচ্ছে বায়ুদূষণ 

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অগ্রহায়ণের আরও সপ্তাহ দুয়েক বাকি থাকলেও উত্তরের বিভিন্ন জেলায় এরইমধ্যে শীতের দেখা মিলেছে। আর গ্রামীণ প্রকৃতির হেমন্তের আবহ কিছুটা ছোঁয়া ফেলেছে রাজধানী ঢাকাতেও। বিশেষ করে রাতের আবহাওয়া অনেকটাই শীতের জানান দিচ্ছে। তবে এরই সঙ্গে নগরবাসীর মনে শঙ্কা বাড়াচ্ছে বায়ুদূষণ। এখনই গণপরিবহনে কিংবা রাজধানীর সড়কে হাঁটলে অনেকসময় নাকে হাত দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। 

বায়ুর মানমাত্রা নির্ধারণকারী সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) বেলা ১২টায় বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল সপ্তম। গত কয়েকদিন ধরেই ঢাকার অবস্থান পাঁচ থেকে সাতের মধ্যেই ঘুরছে। এমনকি আজ সকালেও ঢাকা ছিল পঞ্চম অবস্থানে। এর আগে গত ২১ নভেম্বর অর্থাৎ এক সপ্তাহ আগেও ঢাকা ছিল পঞ্চম অবস্থানে। তখন একিউআই মাত্রা ছিল ১৯২।

আজকের একিউআই মাত্রা ছিল ১৫২; মান অনুযায়ী, এই মাত্রাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। এ তালিকায় আজ সবার উপরে পাকিস্তানের শহর লাহোর, সেখানকার একিউআই মাত্রা ৪১৩।

বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে বায়ুদূষণের প্রধান কারণ হচ্ছে সড়ক। কারণ সড়কে নানা সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলতেই থাকে। ঢাকা শহরের সড়কগুলোতে বেশির ভাগ সময়ই খোড়াখুড়ি চলতেই থাকে। আর এ থেকেই বাতাসে ধুলাবালি ছড়ায়। শীত এলে ধুলাবালির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।’

বায়ুদূষণ কমানোর পরামর্শ দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এর থেকে বাঁচার সহজ সমাধান হচ্ছে রাস্তায় রাস্তায় পানি ছেটানো। শীতকালে বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি থাকার কারণ সে সময় বায়ু শুষ্ক থাকে এবং ধুলাবালি বেশি থাকে। যেহেতু ডিসেম্বর জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি এই তিন মাস বায়ুদূষণের মাত্রা বেশি থাকে। তাই সরকারের উচিত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আর্টিফিশিয়াল রেইনের ব্যবস্থা করা। যাতে করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুকি কিছুটা কমে।’

এদিকে গতকাল সোমবার ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ রোধে নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর ও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এক শুনানিতে সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন। পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনাসহ আদেশ দিয়েছিলেন। ৯ দফার মধ্যে ঢাকার আশপাশের পাঁচ জেলার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা, মাত্রার চেয়ে বেশি কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে চলা যান জব্দ ও ধুলাপ্রবণ এলাকায় দুই সিটি করপোরেশনের নিয়মিত পানি ছেটানোর নির্দেশনা রয়েছে।

শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেছিলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজড করেই ওই ইট ভাটাগুলো চলে। তাদের (কর্মকর্তাদের) নির্মল বায়ুর প্রয়োজন নেই। কারণ তাদের সন্তানরা বিদেশে পড়াশোনা করে, সেখানে নির্মল বায়ু পায়।’