সুন্দরবনবিনাশী সব অপতৎপরতা বন্ধে বাপা’র মানববন্ধন

সুন্দরবনবিনাশী সব ধরণের অপতৎপরতা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। মানববন্ধনে ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘সুন্দরবন দিবস’কে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি, সুন্দরবনকে ধ্বংসকারী আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বন্ধ করা, বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ, সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে নেওয়া সব প্রকল্প বাতিল ও বন্ধের জোর দাবি জানানো হয়।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘সুন্দরবন দিবস ২০২৪’ উপলক্ষে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব দাবি জানান বাপা'র নেতাকর্মীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাপা'র সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম. শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, হাসান ইউসূফ খান এবং চট্টগ্রাম বন বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা মজিবুর রহমান ও বাপা জীবন সদস্য নিখিল চন্দ্র ভদ্র প্রমুখ।IMG_20240214_111016

মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন— নির্বাহী সদস্য ড. হালিম দাদ খান, অ্যাডভোকেট পারভীন আক্তার, হাজী শেখ আনসার আলী, একরাম হোসেন, শাকিল কবির, বাপা জাতীয় কমিটির সদস্য, মুনছেফা তৃপ্তি, তীতলি নাজনিন, আরিফুর রহমান, গ্রিন ভয়েস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, আব্দুল কাদের জিলানী, রবিউল ইসলামসহ গ্রিন ভয়েসের বিভিন্ন শাখার নেতারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সরকার সুন্দরবনকে ধ্বংস করার জন্য একের পর এক প্রকল্প চালু করছে। দেশকে পরিচয়বহনকারী এ সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে আত্মঘাতি সকল প্রকল্প শিগগিরই বাতিল করা প্রয়োজন। দেশের বন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত যে আইন আছে তার যথাযথ প্রয়োগ করে সুন্দরবনকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। অথচ দেশের সরকার সুন্দরবনকে বাঁচানোর জন্য তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বরং বনকে বিভিন্নভাবে ক্ষতি করার জন্য নেওয়া হয়েছে তথাকথিত উন্নয়নের নামে বিভিন্ন প্রকল্প। সুন্দরবনকেন্দ্রিক সকল উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধের দাবি জানান বক্তারা।IMG_20240214_111139

মানববন্ধনে বাপা'র সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ১৯৭৩ সালের একটি ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন— সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। কিন্তু এখন আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি— তার কন্যা সুন্দরবনকেন্দ্রিক একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প চালু করছে। এতে করে সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। আমরা সুন্দরবনকে ধ্বংস করে এমন কোনও প্রকার প্রকল্প সুন্দর বনে দেখতে চাই না।

বাপা'র সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম. শহীদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবন আমাদের জাতীয় পরিচয় বহন করে। বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বন, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য জোয়ারভাটার কারণে টিকে আছে। সুন্দরবনকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দেশের পরিবেশবাদীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

বাপা’র জীবন সদস্য নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, যে সুন্দরবন এ দেশকে আইলা, সিডরের ভয়াবহ থাবা থেকে রক্ষা করে সেই সুন্দরবনে ধ্বংসের নানামুখী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে। তিনি নতুন পরিবেশমন্ত্রীর ১০০ দিনের কর্মসূচির বাস্তবায়নসহ সুন্দরবনকেন্দ্রিক সকল প্রকল্প বন্ধ করার দাবি জানান। একইসাথে সুন্দরবন দিবসকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়ারও দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে একের পর এক সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করছি এর ফলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়েছে। সুন্দরবনের বন, জীববৈচিত্র্য ও নদীগুলো একে একে ধংসের পথে যাচ্ছে। যা কখনই কাম্য না। সুন্দরবনকে ধ্বংস করার জন্য আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি সরকারকে এ চক্রান্ত থেকে বের হয়ে এসে সুন্দরবনকে রক্ষার আহ্বান জানান। পরিবেশবাদী ব্যক্তি ও সংগঠনকে দেশের পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।