হাতিরঝিল-পান্থকুঞ্জ রক্ষায় প্রধান উপদেষ্টাকে গাছ রক্ষা আন্দোলনের চিঠি

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের আওতায় এফডিসি থেকে পলাশী পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ বাতিলের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন’। সংযোগ সড়কটি রাজধানীর পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে সংগঠনটি।

এ নিয়ে সোমবার (৫ মে) সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের উপদেষ্টাদের কাছে একটি লিখিত চিঠি পাঠানো হয়।

এই সংযোগ সড়ককে ‘রাজধানীর পরিবেশবিনাশী’ আখ্যা দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ পার্কের মতো সংবেদনশীল প্রাকৃতিক এলাকা ধ্বংস করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, জনভোগান্তি, হতাহতের ঘটনা, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সেসব তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের দাবি জানানো হয়।

চিঠিটি শুধু প্রধান উপদেষ্টার কাছেই নয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের কাছেও পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব।

তিনি জানান, পান্থকুঞ্জ ও হাতিরঝিল রক্ষার দাবিতে চলমান লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ১৪৩তম দিনে চিঠিটি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, যেখানে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্বন নিঃসরণ কমাতে ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, সেখানে ঢাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির সুবিধার্থে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। রাজধানী দিনদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। অথচ এই প্রকল্প সেই দুরবস্থাকে আরও ত্বরান্বিত করছে।

গাছ রক্ষা আন্দোলনের দাবি, ঢাকা শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা যেমন কাঁঠালবাগান, সেন্ট্রাল রোড ও দিলু রোড এলাকার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হাতিরঝিল। এই জলাধার ভরাট করে এবং পান্থকুঞ্জ পার্কের প্রায় ৪৫ প্রজাতির ২ হাজার গাছ কেটে এই সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছিল। আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদে সেই কাজ আপাতত স্থগিত রয়েছে।

চিঠিতে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে– ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের চুক্তি পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে দেশের স্বার্থ নিশ্চিত করা; হাতিরঝিল ভরাট করে নির্মিত পিলারগুলো সরিয়ে জলাধার ও পরিবেশ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা; পান্থকুঞ্জ পার্কে চলমান নির্মাণকাজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করা; সংযোগ সড়কের পূর্ণাঙ্গ কারিগরি নকশা, অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা, পরিবেশগত ও পরিবহন সমীক্ষা, সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণসহ সব তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা; প্রকল্পের নকশা প্রণয়নকারী, পরামর্শক ও বাস্তবায়নকারীদের জবাবদিহির আওতায় এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

চিঠিতে আরও বলা হয়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে যেভাবে পরিবেশ ও জনজীবনের ক্ষতি হচ্ছে, তা ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ বার্তা বহন করে। তাই এমন প্রকল্পের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে জন্যই দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।