বাংলা ট্রিবিউনকে রুহিন হোসেন প্রিন্স

বিএনপির সঙ্গে মতবিনিময় নিয়ে ভাবছে না সিপিবি

বিএনপির সঙ্গে মতবিনিময় নিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কিছুই ভাবছে না বলে জানিয়েছেন দলটির সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি এও জানান, তার দল ‘এক দুঃশাসনের অবসান করে আরেকটি দুঃশাসনের প্রতিনিধি আনার’ এ বিষয়টিকে নাকচ করে দিয়েছে।

শুক্রবার (৪ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে রুহিন হোসেন প্রিন্স এ কথা জানান। এ সময় তিনি সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর তার চ্যালেঞ্জ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির সম্ভাব্য মতবিনিময় প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় কংগ্রেসে বা সম্মেলনের পর ৪৩ জনের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির ভোটে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রুহিন হোসেন প্রিন্স। এর আগে, তিনি দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। পালন করেছেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্বও।

সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘দলীয় কংগ্রেস আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছে, সে দায়িত্বটাই প্রধান। এটাকে বিবেচনা করে যদি বলি— ‘‘আমাদের কংগ্রেসের স্লোগান হচ্ছে ‘দুঃশাসন হচ্ছে চলছে, সে দুঃশাসন হটাতে হবে, হটিয়ে ব্যবস্থা বদল করতে হবে। তাহলেই জনগণের মুক্তি আসবে। এবং এই কাজটা করার জন্য বাংলাদেশের বাম বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলা। সুতরাং এই সংগ্রামটা জোরদার করা দরকার।’’ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই সংগ্রাম মানে আমাদের শ্রেণি সংগ্রামকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়ার কাজটিই হবে প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন প্রিন্স।

তিনি বলেন,  ‘এই সংগ্রামের মূল লক্ষ্য হবে দেশকে সমাজতন্ত্রের পথে পরিচালিত করা। তার জন্যে আমাদের যে বিপ্লবী গণতান্ত্রিক কর্মসূচি আছে তা বাস্তবায়ন করা এবং সেই লক্ষ্যে আমাদের রাজনৈতিক সাংগঠনিক সব কাজ পরিচালনা করাটাই প্রধান কর্তব্য মনে করি, এটাই আমরা করবো।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে রুহিন হোসেন প্রিন্সের মন্তব্য, ‘এবার যদি আমি অন্য কথা বলি। এই কথাগুলো আমি বললাম, এটাকে যদি ভেঙে ভেঙে বলি—এই দুঃশাসনের অবসানে লড়াইয়ের অনেক পথ আছে। ইমেডিয়েট একটা কাজ, এখন জনগণের ওপরে দুঃশাসনের একটা উপসর্গ হচ্ছে  দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং গ্যাসের দাম বাড়ছে, বিদ্যুৎ দাম বাড়ানোর, পানির দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান। এখন এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে প্রতিরোধী  হওয়া। সুতরাং, আমাদের ইমেডিয়েট কাজ হলো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে, আর ভোটাধিকার অর্জনের দাবিতেই বড় একটা সংগ্রাম করা, সেই লক্ষ্যে কর্মসূচি দেবো।’

নির্বাচনের প্রসঙ্গে রুহিন হোসেন বলেন, ‘এক বছর পরের যে ভোটের কথা আপনি বলছেন, আমি জানি না কবে হবে, কারণ বাংলাদেশে সবই অনিশ্চিত। আগে হচ্ছে ভোটাধিকার আদায় করা। আমরা আগে সেই সংগ্রামটাই করবো। এই সংগ্রামে বিজয়ী হওয়ার পর নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনে আমরা কী প্রভাব ফেলতে পারি।  আমি আশা করি, অতীতের যেকোনও সংগ্রামের তুলনায় আমরা আগামী এই ভোটাধিকারের সংগ্রামে জয়ী হবো। জনগণকে নিয়ে আমরা নির্বাচনের সময়ও যে লড়াই করি, আগের  থেকে আরও ভালোভাবে ভূমিকা রাখতে পারবো।’

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি মতবিনিময় করবে, এ বিষয়ে সিপিবির অবস্থান কী? এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির সদ্য নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে তাদের কোনও কথা হয়নি। আমরা এটা ভাবছি না। কারণ, আমি আগেই বলেছি, একটা দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে আরেকটা দুঃশাসন বা তার প্রতিনিধিদের আনার কোনও লক্ষ্য আমাদের নাই এবং কমিউনিস্ট পার্টি এটাকে নাকচ করে। যার জন্য আমাদের স্লোগানই হচ্ছে, ‘দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও’। সুতরাং ওইটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে কাজ করছে। অতীতে আমরা দেখেছি, তাদের আমলেও দুঃশাসন ছিল। সুতরাং, এক দুঃশাসনের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে আরেকটা দুঃশাসন হতে পারে না।’

আরও পড়ুন: সিপিবি’র সভাপতি শাহ আলম ও সম্পাদক প্রিন্স