ইফতার ও সেহরির ফজিলত

রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হচ্ছে সেহরি খাওয়া। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও সেহরি খেতেন, উম্মতকেও সেহরির ব্যাপারে গুরুত্ব সহকারে আদেশ করেছেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—তোমরা সেহরি খাও। কেননা সেহরিতে বরকত আছে। (সহিহ বুখারি : ১৯২৩)।

সেহরির বরকত ও কল্যাণ নানাবিধ উপায়ে অর্জিত হয়। যেমন- এর দ্বারা ইবাদতের শক্তি অর্জিত হয়, দেহ-মনে উদ্যমতা আসে। ক্ষুধার তাড়নায় সৃষ্ট প্রবৃত্তির বাসনা হ্রাস পায়। বিশেষত সেহরির সময়ে তাহাজ্জুদ ইস্তিগফার ও দোয়া-মোনাজাতের সুযোগ লাভ হয়।

তাছাড়া সেহরির দ্বারা ইসলামে রোজার স্বাতন্ত্র্য রক্ষা পায়। হজরত আমর ইবনুল আ’স (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন—আমাদের রোজা ও আহলে কিতাব তথা ইহুদি-খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্যকারী হচ্ছে সেহরি খাওয়া। (সুনানে নাসায়ি : ২১৬৬)।

শেষ সময়ে সেহরি খাওয়া সুন্নত। হজরত যায়েদ বিন সাবিত (রা.) বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সেহরি খেলাম। অতঃপর ফজরের সালাতে দাঁড়িয়ে গেলাম। জিজ্ঞেস করা হলো, এই দুইয়ের মাঝে ব্যবধান কতটুকু ছিল। বললেন, পঞ্চাশ বা ষাট আয়াত তিলাওয়াতের সময় পরিমাণ। (সহিহ বুখারি : ৫৭৫)।

হজরত মুহাল্লাব প্রমুখ বলেন, উম্মতের জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা সহজতম রাস্তা অবলম্বন করতেন। নবীজি যদি সেহরি না খেতেন তাহলে উম্মত তাঁর অনুসরণে সেহরি না খেয়েই রোজা রাখতো, কিন্তু উম্মতের জন্য তা অতিশয় কষ্টসাধ্য হয়ে যেতো। আর যদি তিনি রাতের প্রথমাংশে বা মাঝের অংশে সেহরি খেয়ে নিতেন, তাহলে এটাও উম্মতের জন্য কষ্টকর হতো। তাছাড়া এটা অনেকের ফজরের নামাজ কাজা হওয়ার কারণ হতো। বিলম্বে সেহরি খাওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন সুবহে সাদিকের আগেই তা শেষ হয়।

কখনও যদি এমন হয় যে, গোসল ফরজ হয়েছে কিন্তু গোসল সেরে সেহরি খাওয়ার মতো পর্যাপ্ত সময় হাতে নেই। তাহলে বিনা গোসলে সেহরি খেয়ে নেবে। অতঃপর গোসল সেরে নামাজ আদায় করবে। কারণ সেহরির জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়। কোনও কারণে যদি সেহেরি খাওয়া সম্ভব না হয়, তাহলেও রোজা রাখতে হবে। কারণ সেহরি খাওয়া রোজার জন্য রুকন বা ফরজ নয়, বরং সুন্নত। সুতরাং এটি ছুটে গেলেও রোজা হবে। তবে ইচ্ছা করে সেহরি বর্জন করা অনুচিত।

ইসলাম সর্বদা পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে। অপরিমিত বা অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে নিরুৎসাহিত করে। দেহ-মন ভালো থাকলে ইবাদত করা যেমন সহজ হয়, তেমনি তা আনন্দমুখর হয়।

সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সারা দিন সিয়াম পালন শেষে সূর্যাস্তের পর প্রথম পানাহার করাকে ইফতার বলে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা রাত শুরু হওয়া পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, রোজাদারের জন্য দুটি খুশি; একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। (সহিহ বুখারি : ৭৪৯২) হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেন, আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে। (সুনানে তিরমিযি : ৭০০)। হজরত সাহাল বিন সাআদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে। (সহিহ বুখারি : ১৯৫৭)।

ইবনে মাজার বর্ণনায় (হাদিস : ১৬৯৮) এর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, “কেননা ইহুদিরা তাদের ইফতার বিলম্বে করে।”

যেকোনও হালাল বস্তু দ্বারা ইফতার করা যায়। তবে খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নত। যদি খেজুর না থাকে তাহলে কেবল পানি দ্বারাও ইফতার করা যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন ইফতার করবে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দ্বারা; নিশ্চয় পানি পবিত্র। (মুসনাদে আহমদ : ১৬২৩৭)।

ইফতারের সময়টিতে দোয়া কবুল হয়। তাই এই সময়ে দোয়ার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিৎ। হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন—তিনটি দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং মজলুমের দোয়া। আল্লাহপাক এটিকে মেঘের উপর তুলে নেন। এর জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেন। মহান প্রভু বলেন, আমার ইজ্জতের কসম, সময়ের ব্যবধানে হলেও আমি তোমাকে সাহায্য করবো। (সুনানে তিরমিযি : ২৫২৬)।

লেখক: মুহতামিম, জামিয়া আরাবিয়া বাইতুস সালাম, উত্তরা, ঢাকা এবং খতিব, মেঘনা গ্রুপ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।