পৃথিবীর কোনও ধর্মই সন্ত্রাসকে পছন্দ করে না: হেফাজতে ইসলাম

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশপুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহিদুল হক সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে ‘অসত্য’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’ ‘জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপেচেষ্টা’ বলে নিন্দা জানিয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, পৃথিবীর কোনও ধর্মই সন্ত্রাসকে পছন্দ করে না।

তারা বলেন, ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসের কোনও সম্পর্ক নেই। ইসলাম কোনও উগ্রতা,জঙ্গিবাদ ও সহিংসতাকে সমর্থন করে না। যারা এসব হামলার সঙ্গে জড়িত, তারা ইসলাম,মুসলমান ও বিশ্বমানবতার শত্রু।

রবিবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে তারা কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়া ঈদগাহে টহলরত পুলিশ ও নিরীহ মানুষের ওপর সন্ত্রাসী হামলারও তীব্র নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে হেফাজত নেতারা অভিযোগ করেন, শনিবার (৯ জুলাই, ২০১৬) বিকেলে কিশোরগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে সুধী সমাবেশে আইজিপি বলেন, জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেবকে (হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় মহাসচিব) ফোন করলাম। উনাকে বললাম গুলশানে এত বড় ঘটনা ঘটলো,কিশোরগঞ্জে ঈদগাহর কাছে হামলা হলো,আপনারা নীরব কেন? এই জঙ্গিরা যে কাজ করছে, এটা কি ইসলামের পক্ষে? জঙ্গিবাদকে কি ইসলাম সাপোর্ট করে?

তারা বলেন, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ একটি মহামারী আকার ধারণ করেছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনেও যারা হত্যাকাণ্ড চালায়, তারা ইসলাম ও মানবতার শত্রু। নাগরিক হিসেবে আমরা কেউ নিরাপদ নই। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীও এটা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ। পুলিশ প্রধানের কাজ হলো, তদন্ত করে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা; হেফাজতকে ঘায়েল করা তার দায়িত্ব নয়। হেফাজত সম্পর্কে আইজিপির বক্তব্য অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে তারা বলেন, হেফাজত ও আলেম সমাজ দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত। কারও কথায় নয়, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, জুলম নিযার্তন, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে সবসময় সোচ্চার ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকবো, ইনশাল্লাহ।

তারা আরও বলেন, সরকারের উচিত দেশের ওলামা, পীরমাশায়েখ,সব দেশপ্রেমিক নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোসহ জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ করা। সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশ মহাবিপদের সম্মুখীন হবে। এ জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে। দেশ ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র কোনও অবস্থায় মেনে যায় না।

তারা বলেন, ইসলাম ও দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আলেম সমাজ যে নিঃস্বার্থ কাজ করছেন, তা স্মরণীয়। কিন্তু সরকারের ভেতরে ঘাঁপটি মেরে থাকা বামপন্থী ও ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠীর সম্মিলিত মিথ্যাচার কওমি মাদ্রাসা ও আলেম সমাজকে ঘায়েল করতে পারেনি; বরং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রজনন কেন্দ্র যে সরকার স্বীকৃত ও নিয়ন্ত্রিত আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আজকের দিনে সুস্পষ্টভাবে তাই প্রমাণিত।

হেফাজত নেতারা বলেন,সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, হামলা, নাশকতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, তাতে বিশ্ববাসী শঙ্কিত ও আতঙ্কিত। সারাবিশ্বেই সন্ত্রাসবাদ রাষ্ট্রযন্ত্রের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইহুদি-খ্রিস্টান সাম্রাজ্যবাদী ইসলামবিদ্বেষী গোষ্ঠী পরিচালিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতি-ধর্ম ও দলমত নির্বিশেষে সূদৃঢ় ঐক্য গড়ে তোলার কোনও বিকল্প নেই।

তারা আরও বলেন, পৃথিবীর কোনও ধর্মই সন্ত্রাসকে পছন্দ করে না। ইসলামের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। ইসলাম কোনও উগ্রতা,জঙ্গিবাদ ও সহিংসতাকে সমর্থন করে না। যারা এসব হামলার সঙ্গে জড়িত, তারা ইসলাম,মুসলমান ও বিশ্বমানবতার শত্রু।

হেফাজতে ইসলামের এ নেতারা বলেন, ইসলামে এ ধরনের অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে মানুষ খুন করা, বৃদ্ধ, মহিলা ও শিশুহত্যা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। মহানবী (স.) যুদ্ধের ময়দানেও নারী, শিশু ও বৃদ্ধকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। ইসলামের  সঙ্গে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনও সম্পর্ক নেই। ইসলাম সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি যে,কতিপয় ইসলামবিদ্ধেষী চক্র পরিকল্পিতভাবে ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদকে একাকার করে মুসলমানদের কলঙ্কিত করতে চায়।

হেফাজত নেতারা বলেন,গুলশানে ও শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলায় তারা স্তম্ভিত। গোটা জাতি উদ্বেগ,উৎকণ্ঠা,আতঙ্ক ও অস্বস্তিতে ভুগছে।

সরকারের কাছে হেফাজত নেতারা আবেদন জানিয়ে বলেন, আমাদের আহ্বান হলো, দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন। দেশের নাগরিক, বিদেশি কূটনীতিক ও সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। দেশ ও জাতির অস্তিত্ব যেখানে হুমকির সম্মুখীন, এমন বিষয়ে রাজনীতির নোংরা খেলায় মত্ত না হয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি চিরতরে বন্ধ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করুন।

নিরপরাধ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।

এসএনএইচ/এবি