অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উদ্বেগ আ. লীগে

Pic for Pavel`s Reportসম্মেলনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা সম্ভব হলেও অস্থিরতা চলছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটিতে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর স্বার্থগত কারণে নানা ধরনের অপকর্মে ইন্ধন জোগাচ্ছে দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনায় এ ধরনের একাধিক অভিযোগ পাওয়ায় উদ্বেগে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

গত এক মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলাসহ এলাকাছাড়া করার চেষ্টা ও মন্দির ভাঙচুর, মসজিদের ভেতরে প্রতিমা রেখে প্রতিপক্ষকে শায়েস্তার চেষ্টা, পরে দফায় দফায় বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ; ঝিনাইদহের শৈলকুপায় দলীয় এমপির অনুসারীদের হাতে আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার আহমেদ মৃধার লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ও গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল উচ্ছেদের নেপথ্যে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এরইমধ্যে রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে ক্ষমতাসীন দলে। এসব ঘটনার শেকড় অনুসন্ধান করতে গিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। ফলে বিষয়গুলো নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের। দলটির সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর  নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকদের ভাষ্য, নাসিরনগরের ঘটনার নেপথ্যে দলটির স্থানীয় নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ায় ইতোমধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছে জাতীয় রাজনীতিতেও। এসব ঘটনায় রাজধানীজুড়ে সভা-সমাবেশ হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে সরকারবিরোধী পক্ষ এসব ঘটনাকে পুঁজি করে জাতীয় রাজনীতিতে সুফল পাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ-দুশ্চিন্তার কথা স্বীকার করে বলেন, এসব কোন্দল তৃণমূল নেতাদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যেই হচ্ছে।  চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে আগামী দিনগুলোতে তৃণমূল নেতাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আরও মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রত্যেক দলেই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল জায়গা করে নেয়। তাদের কাছে দল বড় হয়ে ওঠে না। তারা ব্যক্তিস্বার্থকে বেশি প্রাধান্য দেয়। ফলে দল বিপদে পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘এই মহলটি সব দলেই ভিড় জমায়। আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে এখানেও এদের ভিড় বেড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হবে।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফও তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা সাংগঠনিক সফরে বের হয়ে দলের অভ্যন্তরে নেতায় নেতায় ভুল বোঝাবুঝি দূর করব।’

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের প্রাচীন ও বৃহত্তম সংগঠন। এখানে কোথাও কোথাও মতপার্থক্য তৈরি হয়।’

অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কথা স্বীকার  করে আওয়ামী লীগের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শনিবার চট্টগ্রামে বলেন, ‘ঘরে ঐক্য না থাকলে বাইরের ঐক্য কখনও সুদৃঢ় হবে না। এ ব্যাপারে আওয়ামী পরিবারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।’ তিনি অভ্যন্তরীণ কোন্দলকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘দল করলে দলের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। যারা মানবেন না, তাদের দলে থাকার কোনও অধিকার নেই। গুটিকয়েকের জন্য গোটা দলের বদনাম হতে পারে না। তাদের দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন।  কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এদিকে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, বেশ কিছু কারণে তৃণমূল আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থাকায় দলে পদ-পদবি প্রত্যাশী নেতার সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া দলীয় ব্যানারে বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় স্থানীয় নেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতাও সৃষ্টি হয়েছে। এখন জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেক স্থানীয় নেতা। এসব নিয়ে নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিজেরাই ঘায়েল করার ফন্দি আঁটতে শুরু করেছেন। তাই নানা ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় নেতারা। ব্যক্তিস্বার্থ প্রাধান্য দিতে গিয়ে কোথাও কোথাও অভ্যন্তরীণ কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এগুলো করতে গিয়ে তারা উল্টো দলকেই চাপে ফেলে দিচ্ছে। তারা বলেন, অনেক প্রভাবশালী এমপি ও বড় নেতাও এসব ঘটনায় মদদ দিচ্ছেন। নিজের দলীয় প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে গিয়ে নানাবিধ কোন্দলের জন্ম দিয়ে উল্টো পুরো দলকেই ফেলে দিচ্ছে বেকায়দায়।

জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে কেন্দ্রীয় কমিটি মাঠে নামবে শিগগিরই। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অন্যদের হুঁশিয়ার করবে আওয়ামী লীগ। 

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ঠেকাতে সাংগঠনিক সম্পাদকদের আগে দায়িত্ব পালন করা নিজস্ব বিভাগ পরিবর্তন করে অন্য বিভাগে দায়িত্ব দিয়েছেন। পাশাপাশি দল যেন সাংগঠনিক কাজে সুফল পায়, সেজন্য সাংগঠনিক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের এবারও পরিবর্তন করা হয়নি।

/এমএনএইচ/টিএন/আপ-এসএনএইচ/