রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুধু প্রশংসায় তুষ্ট নয় সরকার, পাশে চায় বিদেশি বন্ধুদের

টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিমপাড় দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা (ফাইল ছবি)অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে সরকার। তবে এই প্রশংসাতেই তুষ্ট নয় সরকার। এই পর্যায়ে সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও বন্ধুরাষ্ট্র চীনসহ রাশিয়ার জোরালো সমর্থন পেতে চায়। সরকার চাইছে, বিভিন্ন দেশ যেন এই ইস্যুতে জোরালো অবস্থান নেয়। দল হিসেবে আওয়ামী লীগও সরকারের পক্ষে বিশ্ব নেতাদের সমর্থন চাইছে। এরই অংশ হিসেবে চীনের সমর্থন আদায় করতে আওয়ামী লীগের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এরই মধ্যে চীনে গিয়েছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পাঠানোর বিষয়ে প্রতিবেশী ও বন্ধুরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াক— তা চায় সরকার। বিশেষ করে ভারত, চীন ও রাশিয়ার অবস্থান যেন বাংলাদেশের পক্ষে হয়, সেটা নিশ্চিত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে সরকার। তবে এর মধ্যে মিয়ানমারের পক্ষে রাশিয়া বিবৃতি দেওয়ায় দেশটির সমর্থন আদায় করা নিয়ে সরকারের ভেতরে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। যদিও এই বিবৃতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাশিয়ার বিবৃতি নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি।’
সরকারের নীতি-নির্ধারকরা জানান, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্বের সবগুলো দেশই রাখঢাক না করেই বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। তবে বাংলাদেশ এসব দেশের জোরালো সমর্থন কতটা আদায় করে নিতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সরকারের দুই নীতি-নির্ধারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। তাই পাশে পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরোপুরি আশাবাদী হয়ে উঠতে পারছে না ক্ষমতাসীনরা।
সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে প্রশংসার চেয়ে এখন জোরালো সমর্থন জরুরি। জানা গেছে, প্রত্যাশা অনুযায়ী সেই জোরালো সমর্থন এখনও আদায় করতে পরেনি সরকার। তা নিয়ে সরকারের ভেতরে দুশ্চিন্তাও দেখা দিয়েছে।
উখিয়ার বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গাদের একটি অস্থায়ী বসতি (ফাইল ছবি)এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছি, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। তবে আমরা চাই, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নেবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অবস্থানের সঙ্গে বিশ্ববাসী আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে বলে আমরা আশা করি। এর জন্য আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে। প্রশংসা পেয়েছি, এখন জোরালো সমর্থন চাই। সেই প্রক্রিয়া চলছে।’
সরকারের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন, এখন কেবল প্রশংসা নয়; প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্যে বাংলাদেশ যে অবস্থান গ্রহণ করেছে, সেই সিদ্ধান্তের পক্ষে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানো। আর এজন্য মিয়ানমারের প্রতি প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর চাপ প্রয়োজন মনে করছে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। তারা জানান, ভারত রোহিঙ্গাদের জন্যে ত্রাণ পাঠিয়েছে। চীনও ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ফেরাতে বাংলাদেশের উদ্যোগের পক্ষে তাদের কেউেই সরাসরি পাশে দাঁড়ায়নি। এ ইস্যুতে সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরির মতো পরিস্থিতি এখনও সরকার তৈরি করতে পারেনি। তবে এখনও সময় আছে এবং বাংলাদেশের পাশে তারা দাঁড়াবে— এই আশা করছে সরকার। বিশেষ করে ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের পরে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরি করা সম্ভব হবে বলেও মনে করছে ক্ষমতাসীনরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সরকারের দুই জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা বিশ্বব্যাপী প্রশংসা পেয়েছি ঠিকই। কিন্তু বিশ্ব নেতাদের কার্যকর সমর্থন ও মিয়ানমারের ওপর যে পরিমাণ চাপ তৈরি করতে পারব বলে আশা করেছিলাম, তা হয়নি। তবে আমরা মনে করি, জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেওয়ার পর বিশ্বনেতারা মিয়ানমারর ওপর চাপ তৈরি করবেন। কারণ, ওই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত চিত্র তুলে ধরবেন, যা বিশ্ববাসী অনুধাবন করতে পারবেন বলে মনে করি আমরা।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। এর ফলে বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের। তবে আমরা চাই বিশ্ব নেতাদের জোরালো সমর্থন। আশা করি সেটাও পাবো।’
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি শুধু আমাদের জন্যে সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ নয়, বিশ্ববাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে।’