বাংলাদেশে বৌদ্ধদের হেনস্তা করা অন্যায়: চরমোনাইপীর

চরমোনাইপীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীমমিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের পর বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা (যারা বৌদ্ধদের নির্ধারিত পোশাক পরেন) আতঙ্কে রয়েছেন। তবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, জুলুম ও নির্যাতনের জন্য বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের হেনস্তা করা ইসলামসম্মত নয় এবং তা অন্যায় বলে জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাইপীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে হেনস্তার বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?

মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা, জুলুম নির্যাতনের জন্য বাংলাদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের হেনস্তা করা ইসলামসম্মত নয়। ইসলাম শান্তির ও কল্যাণের ধর্ম। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের পর বাংলাদেশে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর কোনও মুসলমান হামলা করেছে বলে আমাদের জানা নেই। যদি কেউ তাদের ওপর হামলা করে থাকে, তাহলে তা অন্যায়। কোনও অবস্থাতেই বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা যাতে হেনস্তার শিকার না হয়, সেজন্য সরকারের সতর্ক থাকা উচিত।

বাংলা  ট্রিবিউন: দেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় করণীয় কী? এ বিষয়ে আলেমদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?

মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: বৌদ্ধদের নিরাপদে বসবাসের জন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে। একমাত্র বাংলাদেশেই এ নজির আছে যে, এত ছোট দেশে এত জাতি-গোষ্ঠী সহাবস্থানে সম্প্রীতির সঙ্গে বসাবাস করছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার নাটক তৈরি করে কোনও কোনও  স্বার্থান্বেষী মহল রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতাকে আরও তীব্র করতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে। আলেম-ওলামাসহ সবাই এ বিষয়ে যার যার অবস্থান থেকে ইসলামের শিক্ষা তুলে ধরে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারেন।

বাংলা ট্রিবিউন: রোহিঙ্গা ইস্যুতে  সরকারের করণীয় কী ?

মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের অনেক কিছু করার আছে। রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হয়ে এদেশে আসছে। এতে দেশে সামগ্রিক চাপ পড়ছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। সু চি’র বিরুদ্ধে বিশ্ব আদালতে মামলা করতে হবে। জাতিসংঘের মাধ্যমে এ চাপ দিতে পারে সরকার। মজলুম হয়ে যারা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে, সেই মজলুম মানুষের পাশে থাকা মানবীয় দায়িত্বও ইসলামের শিক্ষা।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার দলের পক্ষ থেকে কী ধরনের পদক্ষপ নেবেন ?

মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম: বিশ্বের যে প্রান্তেই মুসলিমরা নির্যাতিত হয়, আমরা সর্বপ্রথম প্রতিবাদ করে ঈমানি দাবি পূরণ করি। রোহিঙ্গা মুসলমানরা পুনরায় নির্যাতিত হওয়ার খবর প্রকাশিত হলে, বাংলাদেশে সর্বপ্রথম আমরা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করি। গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় তত্ত্বাবধানে অব্যাহতভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। নগদ অর্থ, খাবার, কাপড়চোপড়ের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তাদের খাবার পানির জন্য টিউবওয়েল স্থাপন,টয়লেট নির্মাণ, অস্থায়ী ঘর-বাড়ি নির্মাণসহ বিভিন্ন তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত  ইসলামী আন্দোলন রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক চাপের জন্য মিছিল-মিটিং, দূতাবাস ঘেরাও, জাতিসংঘ দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদানসহ নিয়মিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।