বামপন্থীদের স্থায়ী রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার আহ্বান

অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উপলক্ষে রাজধানীতে শোভাযাত্রাঅক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বামপন্থীদের মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে তা ধরে রেখে স্থায়ী রাজনৈতিক ঐক্যে রূপ দেওয়া প্রয়োজন। মঙ্গলবার (০৭ নভেম্বর) বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাশিয়ায় অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে বাম নেতারা এ আহ্বান জানান।

১২টি বাম রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিত অক্টোবর বিপ্লব শতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।     

আহমদ রফিক বলেন, অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বামপন্থীদের মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে তা ধরে রেখে স্থায়ীভাবে একটি রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। অক্টোবর বিপ্লবের চেতনা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও মানুষের মুক্তি সম্ভব নয়। 

অক্টোবর বিপ্লবের শতবর্ষ উপলক্ষে রাজধানীতে সমাবেশসিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উন্নয়ন দৃশ্যমান কিন্তু তার নিচে অনেক অন্ধকার রয়েছে। যেমন সারাদেশে গত এক সপ্তাহে দেখা গেছে অভাবের কারণে মানুষ আত্মহত্যা করছে। অনেক জায়গায় খুন, ধর্ষণ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, শোষণমুক্ত সমাজের লক্ষ্যে বামপন্থীদের স্থায়ীভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব এখনও প্রাসঙ্গিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে বলা হলেও আসলে অনেক রাষ্ট্র সমাজতন্ত্র থেকে সরে গেছে। ফলে ওইসব দেশে নারীকে পণ্যায়িত করা হয়েছে। 

এই শিক্ষাবিদ বলেন, বামপন্থীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের ভেতরে থেকে কোনও বিদেশি সাহায্য ছাড়াই অবহেলিত জনপদে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছে। তিনি বলেন, অক্টোবর বিপ্লব সামাজিক সম্পর্ক ও সম্পদের মালিকানাকে মীমাংসা করেছে। সম্পদের মালিক কে হবে– পাঁচ ভাগ মানুষ নাকি পঁচানব্বই ভাগ মানুষ, সেটিকে মীমাংসা করেছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। সারাদেশে মানুষ অভাবের কারণে আত্মহত্যা করছে। এ অবস্থা চলতে পারে না। বামদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে।  

বাসদ নেতা খালেকুজ্জামান বলেন, মুক্তিযদ্ধের ৪৬ বছরে বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠী বিভিন্নভাবে দেশ পরিচালনা করেছে। এ কারণে মুক্তিযদ্ধের চেতনা বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে হবে।   

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এ রাষ্ট্রের পুলিশবাহিনী জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলে। তারা দিনে-দুপুরে মানুষের বাড়িতে আগুন দেয়। বিভিন্ন টেলিভিশনে তা দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তাদের বিচারের কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে পারে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে যেকোনও জাতির ধ্বংস অনির্বায। কাজেই এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, মানুষের ইতিহাস মানুষই নির্মাণ করবে। এদেশের মানুষের হাজার বছরের আত্মত্যাগের ওপর যে ইতিহাস তৈরি হয়েছে, সেই ঐতিহ্যের ওপর দাঁড়িয়ে রুশ বিপ্লবের চেতনায়, মুক্তিযুদ্ধের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষায় এদেশে আমরা সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব। সেই শপথ এ শতবর্ষের বিপ্লব উদযাপনের দিনে নতুন করে সবাইকে নিতে হবে। আসুন, আমরা অন্যায়, অপশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নতুন সমাজ গড়ে তুলি। 

এছাড়া, সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস, বাম নেতা মু্ইনুল হায়দার চৌধুরী, মোশাররফ হোসেন নান্নুসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নেতা হায়দার আকবর খান রনো। 

সমাবেশ শুরুর আগে ১২টি বামপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রুশ বিপ্লবের ওপর ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রতিকৃতি নিয়ে মিছিল করেন। সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রা শহীদ মিনার থেকে পল্টন,সচিবালয় ঘুরে আবার শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।