নির্বাচন দিলে বিএনপি ৮০ ভাগ ভোট পাবে: মির্জা ফখরুল

বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

নির্বাচন এখন দেওয়া হলে বিএনপি শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।   

বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে জিয়াউর রহমানের ৮২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি  আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এই দেশ শাসন করেছে। এটাকে শাসন বলবো না, দুঃশাসন বলবো। সেই দুঃশাসন বাংলাদেশের মানুষের মনে থাকার কথা। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ না খেতে পেরে মারা গেছে। আমরা দেখেছি, না খেতে পেরে তখন অনেকে রাস্তায় পড়ে থেকেছে। আমরা দেখেছি, ভাতের মার নিয়ে মারামারি করেছে। রংপুরের বাসন্তী পরনের কাপড় পাননি, সেজন্য তিনি মাছ ধরার জাল পড়ে নিজের লজ্জা নিবারণ করেছেন। এই ব্যর্থতা আর ক্ষোভকে ঢাকতে গিয়ে এই আওয়ামী লীগ সেদিন একের পর এক মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সেদিন জরুরি অবস্থা জারি, বিশেষ ক্ষমতা আইন, সবশেষে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করেছিল।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মিথ্যাচার করেন। এই মিথ্যাচার তারা এজন্যই করেন যে, তারা শুধু জিয়াউর রহমানকে ভয়ই পান না, তারা মনে করেন—জিয়াউর রহমানের আদর্শ আর দর্শন সারাদেশের মানুষের কাছে যদি চলে যায়, তাহলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’

১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা দেখেছি, এই আওয়ামী লীগ ছিলো না, তখন বাকশাল ছিল। তাদের দলের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। সেই দলকে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ফিরিয়ে এনেছিলেন।’

 অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা সেই নেতার অনুসারী, যে নেতা আমাদের এই দেশকে একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে নির্মাণ করার জন্য কাজ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি রাজনৈতিক নেতাদের সম্মান দিতেন। বিরোধী দলের নেতারা যেন সংসদে আসতে পারেন,তিনি সেই ব্যবস্থাও করেছিলেন।’

জিয়াউর রহমানের প্রসঙ্গে বিএনপির নেতা বলেন, ‘তিনি খাল খনন করেছেন। কৃষকদের ঘরে ঘরে গেছেন। নতুন ধানের উদ্ভাবন করে চায়না থেকে দেশে নিয়ে এসেছেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনে তিনি বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। যা এখনও সবুজ বিপ্লব নামে পরিচিত আছে।’ গার্মেন্টস,রেমিটেন্স এবং নারী কর্মসংস্থানের উন্নয়নেও জিয়ার রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন বলেও তিনি জানান।

বর্তমান সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে দর্শন দিয়েছিলেন, যে দল গঠন করে দিয়ে গিয়েছেন, সেই দল আজও এদেশের মানুষের মনের মাঝে রয়েছে। তাই একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে দেখুন। শতকরা আশি ভাগ মানুষ এই বিএনপিকে ভোট দেবে। এর একটি কারণ হলো, জিয়াউর রহমান যে রাজনৈতিক দর্শন দিয়ে গেছেন,সেই দর্শন খালেদা জিয়া বহন করে চলেছেন।’

খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জীবন সায়াহ্নে এসে এখনও তিনি আদালতের কাঠগড়ায় বসে থাকছেন। আজকে আমি ঘৃণা ও ধিক্কার জানাতে চাই, যারা এই মহান নেতাকে (জিয়াউর রহমান) ক্ষুদ্র করতে চায়, ছোট করতে চায়। ঘৃণা ও ধিক্কার জানাতে চাই, যারা আজ দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মামলায় জড়িয়ে কষ্ট দিচ্ছে।’

‘আজকে আমরা সবাই জানি এই মামলা মিথ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু  মামলা দিয়ে সপ্তাহে পাঁচ দিন তাকে প্রায়  কারাগারে  আটকে রাখছেন। দলের সব নেতাকর্মী আটক করে রাখছেন। সারাদেশে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭৮ হাজার মামলা হয়েছে। সাত লাখ ৩৮ হাজার আসামি করা হয়েছে। নেত্রী যখন আদালতে যান, তখন ছাত্রদল, যুবদল,মহিলা দল, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নেতারা যখন খালেদা জিয়াকে এগিয়ে দিতে যান এবং আদালত থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে আসেন, তখন ৪০-৫০ জনকে ধরে নিয়ে যায়। তাদের জামিন দেয় না।  সুতরাং এই অচলায়তন আমাদের ভেঙে ফেলতে হবে’।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আর আমরা কোনও মতেই এই গণতন্ত্র বিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চাই না। আমরা চাই না যে, আমাদের অধিকারকে ক্ষুণ্ন করে, ধ্বংস করে দিয়ে, জাতীয়তাবাদী দলকে ধ্বংস করে দিয়ে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে, তারা আমাদের বুকের ওপর দিনের পর দিন চেপে থাকুক।’

তাই আসুন, আমরা শপথ করি আগামীতে আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবো। পদত্যাগ করুন। একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন এবং তারপর নির্বাচন দিন। জনগণের জন্য সরকার গঠন করুন বলেও বক্তব্য রাখেন তিনি।

এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একজন সফল মানুষ ছিলেন। তার জানাজায় যত লোক হয়েছিল, তা অতীতে আর কোনও প্রেসিডেন্টের ক্ষেত্রে হয়নি। এমনকি ভবিষ্যতেও কোনও প্রসিডেন্টের জানাজায় এত লোক হবে না। তিনি (জিয়া) যে আদর্শ আর ধারণা রেখে গেছেন, সেদিক দিয়ে তিনি সফল। আর ব্যক্তি জীবনেও তিনি একজন সফল মানুষ ছিলেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন । একথা বিতর্কের ঊর্ধ্বে। এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। অথচ আওয়ামী লীগ এ বিষয়টিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে চাইছে।’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের মাধ্যমে আপিল বিভাগ পুনরায় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলে ফিরে গেছে। এতে বোঝা যায়, জিয়াউর রহমানের দূরদর্শিতার কথা। তাই আমাদেরকে প্রতিবাদী হতে হবে।’

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট  জয়নাল আবদীন, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমদ আযম খান, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন-নবী খান সোহেল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক হেলেন জেরীন খান প্রমুখ।