গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা গত কাউন্সিলে বাদ দেয় বিএনপি

বিএনপিদলের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা ২০১৬ সালের ১৯ মার্চে কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে বাতিল করেছে বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ক কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান এ তথ্য জানান। ওই কাউন্সিলে অংশ নিয়েছেন এমন কয়েকজন নেতাও বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ৭ ধারাটি নতুন করে নয়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চেই বাতিল হয়েছে।

ওই সংশোধনের আগে গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারায় বলা ছিল, ‘কমিটির সদস্যপদের অযোগ্যতা-নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ জাতীয় কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি বা যে কোন পর্যায়ের যে কোন নির্বাহী কমিটির সদস্যপদের কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী পদের অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। (ক) ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৮-এর বলে দণ্ডিত ব্যাক্তি; (খ) দেউলিয়া; (গ) উন্মাদ বলে প্রমাণিত ব্যক্তি; (ঘ) সমাজে দুর্নীতিপরায়ণ বা কুখ্যাত বলে পরিচিত ব্যক্তি।’

বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিলের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলদের ভোটে কয়েকটি ধারা বাতিল হয়। কাউন্সিলে উত্থাপিত হওয়ার আগে গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি ৭ ধারাটি বাতিল করার প্রস্তাব করে। এ প্রস্তাব স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদন পায়। পরে কাউন্সিলে সেটি পাস হয়। কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান ধারাগুলো সম্পূর্ণ না পড়ে শুধু নম্বর উল্লেখ করে তা বাতিল করা হয়েছে, এতে কাউন্সিলরদের সম্মতি আছে কি না জানতে চান। কাউন্সিলরা হাত তুলে সম্মতি জানান। দীর্ঘদিন পর গত রবিবার (২৮ জানুয়ারি) নির্বাচন কমিশনে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয় বিএনপি।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা কাউন্সিলেই বাতিল করা হয়েছে। এটা নতুন করে করা হয়নি।’

ঠিক কী কারণে ধারাটি বাতিলের প্রস্তাব ছিল, জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘কাউন্সিলে যা যা সংশোধন হয়েছে, তাই জমা দেওয়া হয়েছে। মুশকিল হয়েছে, অনেকে এটাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছেন।’

তিনি বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য একটি কমিটি ছিল। সেই কমিটি থেকেই এই ধারাটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ কারণে যে, আমাদের দলের সদস্যপদের যোগ্যতা এবং অযোগ্যতা-অলরেডি গঠনতন্ত্রে আছে। আরেকটা ছিল কমিটিতে থাকার ক্ষেত্রে অযোগ্যতা। আমরা মনে করেছি, এটা ঠিক নয়। কারণ, দলে যে সদস্য হতে পারবে, সে নেতাও হতে পারবে। যে সদস্য হতে পারবে না, সে নেতাও হতে পারবে না। কিন্তু একজন সদস্য হতে পারবে, আরেকটা শর্ত দিয়ে সে নেতা হতে পারবে না বলার মানে হলো আমরা সব সদস্যকে নেতা হতে দিচ্ছি না। কারা বিএনপির সদস্য হতে পারবে বা পারবে না এটা তো গঠনতন্ত্রে আছে। সেজন্য অতিরিক্তটি বাদ দেওয়া হয়েছে। গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি এটা বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে, স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা করে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তারপর এটা কাউন্সিলে পেশ করা হয়েছে। এরপর কাউন্সিল এটা অনুমোদন করেছে ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মামলাকে কেন্দ্র গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়েছে। ম্যাডামের ক্ষমতা আছে, ইন বিটুইন কাউন্সিল চেয়ারপারসন ক্যান অ্যামেন্ড অ্যা সাবজেক্ট টু দি অ্যাপ্রুভাল অব দি নেক্সট কাউন্সিল। কিন্তু শি হ্যাজ নট চেঞ্জ অ্যানিথিং ইন বিটুইন। এটা কাউন্সিলে পেশ করা। আমি পেশ করেছি। এক লাইনেই সংশোধনী ছিল যে ধারা ৭ বাতিল হবে।’

বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৮ ধারার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান উপধারায় বলা আছে, ‘চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।’

সে হিসেবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হলে স্বাভাবিকভাবেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পড়বে তারেক রহমানের ওপর। তিনি লন্ডনে থাকায় তার সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী কমিটির মাধ্যমে দলের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে। এক্ষেত্রে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবেন বলে দলের একাধিক নেতারা জানিয়েছেন।

দলটির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার সাজা হলেও দল পরিচালনায় কোনও বিঘ্ন ঘটবে না। স্বল্পমেয়াদে চাপ তৈরি হলেও দলের চেইন অব কমান্ডে কোনও প্রভাব পড়বে না। এমনকি সরকারের তরফে দল ভাঙার যে চেষ্টার কথা বিভিন্ন মাধ্যমে এসেছে, তাও বাস্তবায়ন হবে না বলে বিশ্বাস করেন বিএনপির নেতারা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দল ভাঙার কোনও সুযোগ নেই। সরকার হাজার চেষ্টা করেছে অতীতে। ২০ দলই (জোট) ভাঙতে পারেনি, বিএনপি ভাঙবে। এসব দিবাস্বপ্ন। গত ১০ বছরে চেষ্টা করেছে বিএনপি ভাঙতে। মওদুদ আহমদের বাড়ি নিয়ে নেওয়া হয়েছে, খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছে, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস ও মহাসচিবকে দিনের পর দিন কারাগারে রেখেছে, কোনও লাভ হয়নি।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, ‘এক-এগারোর সময় বিএনপির একটি অংশ বেরিয়ে গিয়েছিল, ওই সময়ও চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে খন্দকার দেলোয়ার হোসেন এক কক্ষে বসে দল পরিচালনা করেছেন। দল চলেছে। ফলে ম্যাডামের মামলায় রায় আসার আগেই দল পরিচালনা নিয়ে ভিন্ন মনোভাব প্রকাশের কোনও সুযোগ নেই।’